কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটার সংক্রান্তে প্রতিবেদন ৬ মাসেও দেননি ইউএনও

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় রোহিঙ্গাদের ভো টার হওয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি হলেও ছয় মাসে তারা প্রতিবেদন দিতে পারেননি। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও এর অগ্রগতি নিয়ে কেউ আশাব্যঞ্জক তথ্য দিতে পারছেন না। অভিযুক্তদেরই কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নে ৩৮ জন রোহিঙ্গার ভো টার হয়ে এনআইডি কার্ড হাতিয়ে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি দেন কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাহিদ ইকবাল। এতদিনেও প্রতিবেদন না দেওয়ায় গত ১৩ জুন ইউএনওকে আবারও চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠিতে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর পরও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মার্চ ইউএনও তিন সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটির আহ্বায়ক কক্সবাজার সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এখনও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি’।
দীর্ঘ ছয় মাস চিঠি চালাচালি এবং কমিটি গঠনেই চলে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, সরকার নির্ধারিত উপজেলা বিশেষ কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর ভো টার করা হয়। তবে ওই বিশেষ কমিটির আহ্বায়ককেই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিলেও সদর উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাড়া পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাসিম আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার কাছে রোহিঙ্গা ভোটারসংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন আসেনি’।
যাদের যাচাই-বাছাইয়ে রোহিঙ্গারা ভো টার হয়েছে, তাদেরই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা– জানতে চাইলে নাসিম আহমেদ বলেন, কর্তৃপক্ষ যাকে ইচ্ছা এ দায়িত্ব দিতে পারে।
এরই মধ্যে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা ভো টার হওয়ার বিষয়ে ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালককে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে গত ৫ জুন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের একজন সহকারী পরিচালককে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছৈয়দ আলম বলেন, ‘আমি কোনো রোহিঙ্গাকে জাতীয়তা সনদ দিইনি’।
রোহিঙ্গা ভো টার প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়ন নিয়ে এবং যাচাই-বাছাই কমিটির অনুমোদনসাপেক্ষে মূলত ভো টার করা হয়। এর পরও অভিযোগের সত্যতা পেলে এনআইডি সার্ভার থেকে তাদের নাম মুছে ফেলা হয়। তিনি বলেন, চারজন ভোটারকে রোহিঙ্গা দাবি করে ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান চিঠির বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, যাদের যাচাই-বাছাইয়ের পর ভো টার তালিকায় রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করে রোহিঙ্গাদের ভো টার করার অভিযোগটি তদন্ত করলে ভালো হতো। অন্যথায় প্রতিবেদনটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ