পাহাড় কেটে সড়ক-ঘর, কাউন্সিলর জসিমের ভাইসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ’য় পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের অভিযোগে স্থানীয় আলোচিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের আপন ছোট ভাই আকবর হোসেন খোকনসহ ১৭ ভূমি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আজ শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে নগরীর বায়েজিদ লিংক রোডের পাশে আকবরশাহ থানাধীন উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় অভিযানে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের সত্যতা পায় জেলা প্রশাসনের টিম। অভিযানে নেতৃত্ব দেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।
১৬ ভূমি মালিক হলেন জাফর আহামদ মজুমদার, মোহাম্মদ হাছান আহাম্মদ কন্ট্রাক্টর, মোহাম্মদ আইয়ুব মিঞ্চা, এস এম নুরুন্নবী, সৈয়দা মাসকুরা আক্তার, মোছাম্মৎ জেবুন্নাহার খানম, মোছাম্মৎ শকিনা আক্তার চৌধূরী, সোহরাব হোসেন, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ফরিদ মিঞ্চা, আবুল মনসুর, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্দ হামিদ, ডাক্তার শামীমা আকতার এবং মোহাম্মদ সোলায়মান।
এছাড়া বায়নামূলে মালিকানা নিয়ে সড়ক নির্মাণে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় আকবর হোসেন খোকন নামে একজনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, আকবর হোসেন খোকন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের আপন ছোট ভাই। তিনি কখনো কোনো পদে না থাকলেও পরিচয় দেন যুবলীগ নেতারূপে। তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা মামলাসহ একাধিক মামলা রুয়েছে। পুলিশের উপর হামলা মামলায় আদালতে দেয়া অভিযোগপত্রে তিনি প্রধান আসামি।
চসিকের ব্যাপক সমালোচিত কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল নিজের গরুর খামার তৈরিতে ব্যাপকভাবে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণকালে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওমর ফারুক। এসময় জসিম নিজে উপস্থিত হয়ে অভিযানে বাঁধানের অভিযোগ উঠে। এই ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলার নির্দেশনা যায় জেলা প্রশাসন থেকে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানান, ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বোস্তামি সিডিএ লিংক রোডের পাশে একটি পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো হচ্ছে। রেকর্ড অনুযায়ী উত্তর পাহাড়তলী মৌজার টিলা শ্রেণির ১৯৩ দাগের দেড় একরের বেশি পাহাড়ের মালিক ১৬ জন। এদের কাছ থেকে বায়নাসূত্রে মালিকানা নিয়ে আকবর হোসেন খোকন পাহাড় কেটে চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করছিলেন। প্রায় ৯০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড়টি যেভাবে কেটে রাস্তা বানানো হচ্ছে, সেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা যখন অভিযানে যাই তখনও পাহাড় কাটা হচ্ছিল। আমাদের দেখে দ্রুত জড়িতরা সরে যায়। সেখানে আকবর হোসেন খোকনের নামে সাইনবোর্ড পাওয় যায়। এর আগে পরিবেশ অধিদফতর দুই দফা সেখানে পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছিল। কিন্তু তারা আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি’।
অভিযানের পর পরিবেশ সংরক্ষন আইনে পরিবেশ অধিদফতরকে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানান।
আকবর শাহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি থানায় কোনো এজাহার পাইনি। এজাহার পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর হোসেন খোকন বলেন, ‘বায়নাসূত্রে আমি জমির মালিক, সেটা ঠিক আছে। পারিবারিকভাবে আমাদের জমির ব্যবসা আছে। কিন্তু পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। আসল ঘটনা হচ্ছে, পাহাড়ের ওপরে আমাদের জমিতে একটি দরিদ্র রিকশাওয়ালার পরিবার থাকে। তারা আমাদের সম্পত্তির কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ওপর থেকে পাহাড়ের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। পরিবারটি পাহাড়ে উঠানামার জন্য ভাঙা অংশে কিছু বালির বস্তা দিয়ে পথ তৈরি করেছে। জেলা প্রশাসনের লোকজন সেটা দেখে বলছেন, আমি পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করছি। আমি তো সেখানে কখনও যাইওনি। আমার ভাই কাউন্সিলর। আমাদের পেছনে এমনিতেই লোক লেগে আছে। আমার কী মাথা খারাপ হয়েছে যে, আমি পাহাড় কেটে রাস্তা বানাব’।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর