ফেঁসে যাচ্ছেন চসিকের সেই সুদীপ-ঝুলনসহ জড়িতরা

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আইসোলেশন সেন্টারের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানো হয়। বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয় দ্বিগুণ দামে। এমনকি টেন্ডার ছাড়া পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় কাজ। এনিয়ে অভিযোগ গড়িয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে অনিয়মের ফিরিস্তি।
এই অনিয়ম নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল তিনটায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালকের কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের (স্থানীয় সরকার শাখা) এক নোটিশে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ (সিটি কর্পোরেশন-২ শাখা) ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখের ৪৬,০০,০০০০.০৭১.১১.০০৪.১৩ (অংশ-১)-১০০ সংখ্যক স্মারকে পাঠানো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় অস্বাভাবিক ব্যয় ও জরুরি সেবা প্রদান অনিয়মের বিষয়ে শুনানি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (সিটি কর্পোরেশন -২ শাখা) সেই নোটিশ বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় অস্বাভাবিক ব্যয় ও জরুরি সেবা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগটি সরেজমিন তদন্তপূর্বক সুষ্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যান্ত্রিক শাখার দায়িত্ব পালনকারী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অ.দা.) সুদীপ বসাকসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন আগামি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিভাগে পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে পুনরায় অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনার প্রাদুর্ভাব ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আগ্রাবাদের সিটি হলে কোভিড আইসোলেশন সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মূল্যের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়। এই কেনাকাটা নিয়ে তদন্তে নামে দুদক।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশানের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) ও প্রাক্তন কন্ট্রোলার অব স্টোরস সুদীপ বসাক মূল্য যাচাই না করেই বেশি মূল্যে সরঞ্জাম ক্রয় করেন। ৪০ টাকা দরের মগ ক্রয় করা হয়েছে ১৫০ টাকায়, ৯৫০ টাকার হ্যান্ড গ্লাভস ক্রয় করা হয়েছে ১৮০০ টাকায়, ২৮০ টাকার বেড শিট ক্রয় করা হয়েছে ৭০০ টাকায়, ৪০০০/৫০০০ টাকার বেড ক্রয় করা হয়েছে ১৫৮০০ টাকায়, ১৯০০০ টাকার মন্ট্রিজেন সিলিয়ার কেনা হয়েছে ২৭০০০ টাকায়। একইভাবে সব দ্রব্যাদিতে বেশি খরচ দেখিয়েছেন।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অজুহাতে অসৎ উদ্দেশ্যে পিপিআর ২০০৮ এর ৭৬(১) এর ঞ ধারার অপব্যবহার করে টেন্ডার ছাড়াই বাজার মূল্য যাচাই না করে সামগ্রী ক্রয় এবং অন্যান্য কাজ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেদের মন যতো কয়েক গুণ বেশি খরচ দেখিয়েছেন। যার ফলে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই কেনাকাটায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ও প্রকিউরমেন্ট অফিসার সালমা খাতুন, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আবু সাদাত মো. তৈয়ব, প্রোগ্রামার ও আইটি অফিসার মো. ইকবাল হাসান এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাস জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ডিসি/এসআইকে/সিসি