বৈরুতে জোড়া বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশিসহ নিহত ৭৮, ২১ বাংলাদেশিসহ আহত প্রায় ৪০০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত এবং প্রায় ৪ হাজার মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান।  আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একসঙ্গে এতো আহত মানুষের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বৈরুতের হাসপাতালগুলো।  লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এসব আহত মানুষকে সেবা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।  অনেক হাসপাতাল স্থানের সংকুলান না হওয়ায় আর কোনো রোগী নিতে পারছে না।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।  লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করছে দূতাবাস।  এর আগে বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে ওই বিস্ফোরণে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১৯ সদস্য আহত হয়েছেন।  তবে যিনি মারা গেছেন তিনি নৌবাহিনীর সদস্য নন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।  পেশায় তিনি একজন শ্রমিক। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, নিহত শ্রমিকের নাম রনি মিয়া।  তার বাবার নাম তাজু মিয়া।  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদেশ্বরা গ্রামে তার গ্রামের বাড়ি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী- আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের লেবানিজ শাখার প্রধান জর্জ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ এই বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছি।  বিস্ফোরণস্থলের পাশে কিংবা সেখান থেকে অনেক দূরের রাস্তাগুলোতে যত্রতত্র আহত ও নিহত মানুষ পড়ে আছে’।
দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের লেবানিজ শাখা, স্বাস্থকর্মী ও দেশটির রাজনীতিবিদেরা হাসপাতালের আহতদের মানুষকে রক্তদান করার আহ্বান জানিয়েছে।  ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য চেয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী।  ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা বৈরুত শহর।  বিস্ফোরণ অনুভূত হয়েছে দেড়শো কিলোমিটার দূর পর্যন্ত।  বহু প্রাণহানির শঙ্কা করা হচ্ছে।  শহরজুড়ে ভবনগুলোর জানালা ও বাড়ির ছাউনি ভেঙে পড়ে।  বিস্ফোরণটি এত শক্তিশালী ছিল যে মানুষ ভূমিকম্প ভেবে চিৎকার ও ছুটোছুটি শুরু করে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে, যে স্থানটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বন্দরের গুদাম রয়েছে।  রাসায়নিকের মজুদ থাকা বন্দরের গুদামে প্রথম আগুন লাগার কথা জানা গেছে।  লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আল-জাজিরাকে বলেছেন, বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করা ছিল।  তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখা গেছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওচিত্রে।  সেন্ট্রাল বৈরুতের বাসিন্দারা আকাশে ধোঁয়ার লাল কুণ্ডুলী দেখতে পান।  বিস্ফোরণের বিকট শব্দে স্থানীয় ও প্রবাসীসহ সেন্ট্রাল বৈরুতের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  দুর্ঘটনাবশত বিস্ফোরণটি ঘটে থাকতে পারে বলে জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিচেল ওন দেশের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।  প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য যারাই দায়ী হোক, তাদের চরম মাশুল দিতে হবে।  রাসায়নির গুদাম থেকে এই বিস্ফোরণের ধারণা করলেও তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি প্রধানমন্ত্রী।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ