ওয়াসার অযাচিত খোঁড়াখুঁড়ি আর কাজ চুরিতে দুর্ভোগে বোয়ালখালীবাসী

মুহাম্মদ জুয়েল, বোয়ালখালী প্রতিনিধি >>>
চট্টগ্রাম ওয়াসার অযাচিত খোঁড়াখুঁড়ি পরবর্তী কাজ চুরিমূলক গাফেলতিতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নগর্ত খুঁড়ে কাজ শেষে তা যথাযথভাবে পূরণ না করেই চলে যাওয়ার কারণে ওয়াসার সেই খুঁড়ে রাখা খাঁদে পড়ে আহত হচ্ছেন মানুষ।  চরম ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের।  চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।  চট্টগ্রাম নগরী ছাড়িয়ে সেই খোঁড়াখুঁড়ির সম্প্রসারণ ঘটেছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলাতেও।  যত্রতত্র যেখানে সেখানে কোনো ধরণের পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে চলাচলের ভালো সড়কে ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের অজুহাতে গর্ত করে চলে যাওয়া এবং চলাচলকারী সাধারণ মানুষের সেই চিরচেনা পথে নির্বিঘ্নে হাঁটতে গিয়ে কিংবা গাড়ি চলতে গিয়ে ওয়াসা সৃষ্ট সেই গর্তে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হওয়ার ঘটনা অসংখ্য।  ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও ওয়াসার পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়িতে সতর্ক করা হয়েছে।  এতেও কোনো কর্ণপাত করছে না ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।  একেবারে নিজেদের মতো করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে তারা একের পর এক উন্নয়ন কাজের নামে মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।
পাইপ বসানোর কাজের প্রয়োজনে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি শেষে তা যথাযথভাবে ভরাট না করেই তারা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে কাজ করতে।  তাদের এসব গর্তে পড়ে প্রতিদিনই নানান দুর্ঘটনা ঘটছে।  শনিবার (১০ অক্টোবর) সকালে উপজেলার চিটাগাং বেকারির সামনে একটি মিনি ট্রাক ওয়াসা সৃষ্ট সেই গর্তে পড়ে আটকে যায়।  এতে করে পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজট।  চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। রোগীবাহী ।  অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে নানান রোগে আক্রান্ত মানুষকে বহনকারী গাড়িও আটকে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
দুর্ঘটনায় পতিত ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক চালক দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, ওয়াসা এখানে যে গর্তটা করেছে তা অসম্পূর্ণ রেখে গর্ত রেখেই চলে গেছে।  সেখানে তারা কোনো নিশানা না দিয়ে বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করে দেওয়ার কারনে আমার ট্রাকের ফ্রমক্সেল, ইঞ্জিন, ইয়ারগ্রিল তেলের টাংকি ভাঙছে।  প্রায় এক লক্ষ টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে।  এই ক্ষতিপূরণ কে দিবে?  এই ক্ষতিপূরণ কি ওয়াসা দিবে?  আজ যদি এ দুর্ঘটনায় বড় কিছু হয়ে যেতো সামনে মানুষ থাকলে মারা যেত?  এর দায়ভার কে নিতো?
ওয়াসার কাজের জন্য সৃষ্ট গর্ত ভরাট করা হয় বালু দিয়ে।  তবে, কোনো রকম বিপদজনক চিহ্ন না দেওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেন পথচারী ও ব্যবসায়ীরা।  দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়ে পথচারী সাজ্জাদ আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করে দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আমি যে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি এটা আমার হয়ত মা-বাবা ও মুরব্বিদের দোয়ায়।  আমি স্বাভাবিকভাবে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলাম।  চোখে দেখছি রাস্তা ঠিক আছে।  আমার মতো ট্রাক চালকও দেখছেন রাস্তা ঠিক আছে।  হঠাৎ দেখতেছি আমার পাশে আসার সাথে সাথে ওয়াসা সৃষ্ট গর্তে পড়ে ট্রাকটা উল্টে গেছে।
উল্টে যাওয়ার সাথে সাথে সবাই আতংকিত হয়ে গেল।  পরে জানতে পারলাম ওয়াসার কাজের জন্য সেখানে যে গর্ত করা হয়েছিল তা বালু দিয়ে চাপা দেয়ায় ভেতরে গর্তটি রয়ে গেছে।  আর এতেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।  ওয়াসার কর্মীরা কাজ করে গর্তটা বালু দিয়ে ভরাট করে দিয়ে গেছে যা বোঝা যাচ্ছে না।  বালু দিয়ে এমনভাবে ভরাট করেছে অনেক বড় গর্ত হলেও তা বোঝা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, ট্রাক না হয়ে যদি এটা যাত্রীবাহী গাড়ি হতো নিশ্চিত মানুষ মারা যেতো।  পাশে যে একটা তরকারির দোকান আছে ভাগ্যিস!  মানুষ ছিলনা না।  তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারত।
পথচারী নিলুপা বেগম বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে ওয়াসার প্রতি আকুল আবেদন করব আপনারা যে উন্নয়ন করছেন সে উন্নয়ন করতে গিয়ে যদি মানুষের ক্ষতি হয় সে উন্নয়ন আপনারা কইরেন না।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, বড় গর্তের মধ্যে বালু দিয়ে ভরাট করেছে।  এখানে কোনো চিহ্ন দেওয়া হয়নি।  যেখানে আমার দেওয়া লোহা গভীরে ঢুকে যাচ্ছে সেখানে গাড়ি কেন ঢুকবে না?
সিএনজি অটোরিকশাচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার জানা মতে চট্টগ্রাম শহরে ওয়াসার কাজ করতে দেখছি রাত্রিবেলা কিন্তু আমাদের বোয়ালখালীতে দিনের বেলায় ওয়াসার কাজ করে সাধারণ যাত্রিদের ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে।  যানজটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুল আলম মুঠোফোনে দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, আমি তো জানি না।  চিটাগাং বেকারির সামনে এরকম আছে।  আমাকে খোঁজ নিতে হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমজে