জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় আবারো শ্রমিক হতাহত

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত জিপিএইচ ইস্পাত (রড তৈরির) কারখানায় আবারো শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।  শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) মোহাম্মদ মোস্তফা (৩৬) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।  একই ঘটনায় মো. রাশেদ (২৫) নামের অপর এক শ্রমিক আহত হয়েছেন।  শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সকালে উপজেলার কুমিরা-বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির-মগপুকুর এলাকায় অবস্থিত রড তৈরির কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।  নিহত মোস্তফা কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেরপুর থানার বারশিকুরা গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে।  আহত রাশেদ উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের হিঙ্গুলীপাড়া গনি মুক্তার বাড়ির মো. তাজুল ইসলামের ছেলে।
জানা গেছে, শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সকালে জিপিএইচ ইস্পাত ফ্যাক্টরিতে মেইনটেইনেন্সের কাজ করার সময় প্যাডেলের ঢাকনার সাথে ধাক্কা লেগে দুই শ্রমিক গুরুতর আহত হন।  আহতাবস্থায় তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোস্তফা মৃত্যুবরণ করেন।  আহত রাশেদ বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘সীতাকুণ্ড থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় দুই শ্রমিককে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।  তারা দু’জনই জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার শ্রমিক বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি’।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন মোল্লা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি, তবে এখনো কেউ থানায় আসেনি।  কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো’।
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ২০ অক্টোবর ফার্নেস বিস্ফোরণে ৬ শ্রমিক দগ্ধ হয়।  অগ্নিদগ্ধ শ্রমিকেরা হলেন চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর এলাকার হাফেজ জাকির হোসেনের ছেলে মফিজুর রহমান (২৮), বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার গাবোনিসা এলাকার ছালাম শেখের ছেলে আবু সাঈদ (৩৭), সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া মুহুরি পাড়া এলাকার রবিন্দ্র দাশের ছেলে শিমুল দাশ (২৯) সহ আরো তিনজন অগ্নিদগ্ধ হন।  তাদেরকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল।
এর আগে একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় ফার্নেস বিস্ফোরণে ভারতীয় নাগরিকসহ ৭ শ্রমিক দগ্ধ হয়েছিল।  এই ঘটনায় আহতদের শরীরের প্রায় ৩০-৪০ ভাগ অংশ পুড়ে যায়।  প্রথমে তাদের চমেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করলেও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছিলো।
এভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকেরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায় না।  মালিকপক্ষ প্রভাবশালী এবং বিত্তশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপও নিতে পারে না।  প্রশাসনের কর্তারাও অজ্ঞাত কারণে এসব বিষয়ে তেমন মাথা ঘামান না।  শ্রমিক সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে অজ্ঞাত কারণে কোনো ভূমিকা রাখে না।  ফলে আহত হয়ে পঙ্গত্ববরণ করা শ্রমিক পরিবারের বোঝা হিসেবে চিহ্নিত হয়।  দারিদ্রতার কষ্টাঘাতে এই পরিবারগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবে বিবেচিত হয়।
যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায়ে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান শ্রমিক ও তাদের পরিবার।

ডিসি/এসআইকে/ইউএস