শ্বশুর-শাশুরির জেদের মুখে অভিমানে প্রাণ দিলেন নববধূ

মানিকছড়ি প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েও কপালে সুখ জোটেনি জেসমিন আক্তার রিমির (২৫)।  প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় নানা কারণে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
গত সোমবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে মানিকছড়ির মাস্টারপাড়া এলাকার ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন নববধূ জেসমিন আক্তার রিমি।  নিহত জেসমিন আক্তার রিমি লক্ষ্মীছড়ির শীলছড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন ও জুলেখা দম্পতির একমাত্র মেয়ে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দু-তিন বছর আগে মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হলে মা জুলেখা বেগম মেয়ে জেসমিন আক্তার রিমি ও ছেলে জাহেদুল ইসলামকে নিয়ে মানিকছড়িতে গিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন।  কলেজপড়ুয়া জেসমিন আক্তার রিমি ও এসএসসি পরীক্ষার্থী জাহেদুল ইসলামের ভরণ-পোষণে মা একপর্যায়ে বিদেশে পাড়ি জমান।
এদিকে মা-বাবার অনুপস্থিতিতে পাঁচ-ছয় মাস আগে মানিকছড়ি উপজেলার তিনটহরী এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জাড়িয়ে পড়েন জেসমিন আক্তার রিমি।  অভিভাবকদের না জানিয়ে তিন-চার মাস আগে বিয়ে করে ভাড়া বাসায় সংসারও শুরু করেন জেসমিন-জুনায়েদ।
কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে জুনায়েদ হোসেনের প্রভাবশালী পরিবার বিয়ে মেনে না নিয়ে পুত্রবধূর কাছ থেকে ছেলেকে সরিয়ে নিতে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করেন।  কাবিননামায় উল্লেখিত অর্থ ছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হলেও রিমিকে তালাক দিতে ছেলের ওপর চাপ অব্যাহত রাখেন।
এক পর্যায়ে জুনায়েদ হোসেন আত্মগোপন করেন।  এ খবর জানতে পেরে স্বামীকে ফিরে পেতে সুয়াবিল গিয়ে বৈঠকে বসেও স্বামীর অধিকার পেতে ব্যর্থ হন নববধূ জেসমিন আক্তার রিমি।  স্বামীকে ফিরে পেতে চেষ্টার ফলে নিজের একমাত্র আয়ের পথ স্থানীয় আল-আরাফাহ ব্যাংকের চাকুরিটিও চলে যায়।  বারবার অপমাণিত হয়ে, চাকুরি হারিয়ে ও শ্বশুরবাড়ির অমানবিক আচরণে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে মানিকছড়ির মাস্টারপাড়ার ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রিমি।
দীর্ঘক্ষণ ঘরে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেয়।  পরে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে রিমিকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মহিউদ্দিন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মানিকছড়ি থানা পুলিশের ওসি মো. আমির হোসেন জানান, শ্বশুরবাড়ির কেউ এ বিয়ে মেনে না নেয়ায় স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে রাগে ক্ষোভে রিমি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।  বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিসি/এসআইকে/এমজেএইচ