গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে মানুষ

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সারাদেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার।  আর এর সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি।  গত জানুয়ারির শেষ ১৫ দিনের হিসেব বলছে দেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।  একইসঙ্গে আহত হয়েছেন শতাধিক।  বছরজুড়েই এ ধরনের কয়েকশ সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।  কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবের কারণে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগেই সতর্ক হতে হবে, নইলে ঘটতে পারে বিপত্তি।  তাতে প্রাণও যেতে পারে। সবার আগে যে বিষয়টি দেখতে হবে তা হচ্ছে সিলিন্ডারের মেয়াদ আছে কি না।  সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখার পর এটির সঙ্গে সংযুক্ত ভালবটির মেয়াদও দেখতে হবে।  সেখানে কোনও ছিদ্র আছে কি না তা যাচাই বাছাই করতে হবে। মূলত এই দুই কারণে সিলিন্ডার থেকে লিকেজের কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
সারাদেশে যে এলপিজি বিক্রি হয় সেই সিলিন্ডারগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষা করা হলেও সিলিন্ডারের মুখের ভালব একেবারে গ্রাহকের ঘরেই থাকে।  সেই দায়িত্ব গ্রাহককে নিতে হবে। সাধারণত দুই বছর পর পর ভালব বদল করা উচিত হলেও গ্রাহক বছরের পর বছর একই ভালব ব্যবহার করেন।  এতে ভালবে ছিদ্র তৈরি হয় আর সেখান থেকে গ্যাস বের হয়ে ঘরের মধ্যে জমে থাকে।  বদ্ধঘরে এভাবে গ্যাস জমে গেলে আগুনের সংস্পর্শে এলেই ঘটে দুর্ঘটনা।
ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েই এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তা।  তাদের মতে দেশে যে সব দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য গ্রাহকদের সচেতন হওয়া জরুরি।
গত ১৫ দিনে ঘটে চার দুর্ঘটনা
ঘটনা-১: গত ২২ জানুয়ারি কক্সবাজারের মহেশখালীতে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বেলুন বিক্রেতাসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।  এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত আটজন।  উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার স্থানীয় শাহ মজিদিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মাতারবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনা-২: ২২ জানুয়ারি একই দিন বান্দরবানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মাইক্রোবাসে আগুন, ৬ পর্যটক আহত হয়েছেন। বান্দরবান জেলা শহরের বাসস্টেশন এলাকায় ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই মাইক্রোবাসে আগুন লাগে।
ঘটনা-৩: ২২ জানুয়ারি বরগুনার পাথরঘাটায় বরফ মিলের অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একজন নিহত হয়। এছাড়া বিষাক্ত গ্যাসে ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।  বিস্ফোরণের পর অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।
ঘটনা-৪: ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সাতজন দগ্ধ হন।
কেন এই অগ্নিকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না জানতে চাইলে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।  তদন্ত কমিটি করা হয়, কমিটি সুপারিশ করে, সেই সুপারিশ বাস্তবায়নে আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেই পাশাপাশি বিতরণ কোম্পানিগুলোকেও চিঠি দেই।  কিন্তু তারপরও বন্ধ হচ্ছে না এই বিস্ফোরণ। এক্ষেত্রে অসচেতনতা, নিম্নমানের যন্ত্রাংশের ব্যবহার এবং যত্রতত্র বিক্রির কারণকে আমরা চিহ্নিত করেছি।  এগুলো বন্ধ করতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের চিঠি দিয়েছি।  চিঠিতে অবৈধভাব সিলিন্ডার বিক্রি করছে এলাকায় অভিযান পরিচালনা করার জন্য।  সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতেও বলা হয়েছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমি একেবারে নিশ্চিত সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণে কোনও সংস্থাই কাজ করছে না।  সবার আগে মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে।  প্রয়োজনে কোনও সংস্থার মাধ্যমে একটা স্ট্যান্ডার্ড করতে হবে।  সেই স্ট্যান্ডার্ড মানছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।  প্রথমে ধরতে হবে কোম্পানিগুলোকে। কোম্পানিগুলোকে জোর করতে হবে এই মান নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।  নিয়ন্ত্রণ না করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করাও জরুরি। পাশাপাশি গ্রাহককে সচেতন করার বিষয়টিও আমাদের দেখতে হবে।  আসলে গুরুত্ব দিয়ে কাজটা করাই সবচেয়ে জরুরি।

ডিসি/এসআইকেে/এমএস