দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘ভূত’ আতঙ্কে বরিশালের জমজম নার্সিং কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার থেকে আজ শনিবারের (১৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে নার্সিং কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে তিন দফায় ছয় জন অসুস্থ হওয়ার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। শনিবার সাত দিনের জন্য নার্সিং কলেজ বন্ধের আগেই হোস্টেল ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নার্সিং কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে শুক্রবার প্রথম ‘ভূতের হানা’র পর শনিবার পর্যন্ত মোট ছয় জন অসুস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার সাত দিনের জন্য কলেজ বন্ধের ঘোষণা আসার আগেই হোস্টেল ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী জানান, হোস্টেলে প্রায় ৩৫ ছাত্রী থাকেন। অনেকদিন ধরে কয়েক জন ছাত্রী বলেছিলেন, রাতের বেলায় ছাদে হাঁটাহাঁটির শব্দ পাওয়া যায়। কলেজ প্রশাসনকে নিজেদের আতঙ্কের কথাও জানিয়েছিলেন তারা। শুক্রবার সকালে কোনো একটি অবয়ব দেখে ভয় পেয়ে অসুস্থ এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন কয়েকজন ছাত্রী।
ভূত আতংকের বিষয় নিয়ে অনেকেই অবশ্য হাসি-ঠাট্টা করছেন। বিষয়টিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন কলেজের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক। তবে কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের চোখে-মুখে দেখা গেছে আতংকের ছাপ।
কলেজের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক কোনোভাবেই মানছেন না, ভূত ছাত্রীদের শরীরে নখের আঁচড় দিতে পারে। তার ভাষ্য, এলার্জি থেকে এই সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া ওই ছাত্রীরা ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া না করায় মানসিক অসুস্থতায়ও আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি জানান, এক সময় কলেজের ষষ্ঠ তলায় মাদ্রাসা ছিল। সেটি সরিয়ে দেয়া হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ছিল ছাত্রী হোস্টেল। পরে হোস্টেল পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় নেয়া হয়। এর আগে এমন ঘটনার কথা শোনার পর হুজুর ডেকে মিলাদ পড়িয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
‘ভূত দেখে’ জ্ঞান হারানোর পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ছাত্রী বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিমু নামে এক ছাত্রীর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটে। পরে মার্চে তো আমরা এখান থেকে চলে যাই। এরপর অনেকদিন ধরে ছাদে নানা ধরনের শব্দ পেতাম। ছাদ আটকানো থাকলেও এই শব্দটা আমাদের আতংকিত করত। শুক্রবার সকালে মিথিলা নামে এক জনকে আঁচড় দেয়ার পর আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং হোস্টেল সুপারকে জানাই। সন্ধ্যার পর জামিলা নামের এক ছাত্রী ফোনে কথা বলার সময় বারান্দা থেকে উপরে একটি কালো অবয়ব উঠতে দেখেছে। তার দিকে তাকানোর পর লাল চোখ দেখতে পেয়ে ভয়ে চিৎকার করে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর আমরাও সেটা দেখে জ্ঞান হারাই’।
ছাত্রী হোস্টেলের সুপার শাওনা আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার সকালে আমি মিথিলার কক্ষেই ছিলাম। সে বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর হঠাৎ হাতে জ্বালা পোড়া হলে আঁচড় দেখতে পায়। আমি নিজেও দেখেছি। তা ছাড়া আমি নিজেও নানা ধরনের শব্দ শুনেছি। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছিল।’
কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, হোস্টেল ভবনে সমস্যা রয়েছে। ভৌতিক ভৌতিক ভাব একটা। ছাত্রীরা বলছে সমস্যা হয়েছে। এর সত্যতা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। মাদ্রাসা চলে যাওয়ার পর থেকেই এমন সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
তবে কলেজের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর জালিস মাহামুদ বলেন, ‘কোনো কারণে শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা যা বলছেন তেমন কোনো বিষয় ঘটেনি। তাদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুন্সি এনাম জানান, আবাসিক ছাত্রীদের ভীতি দূর করতে কাউন্সিলিংয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হুজুর এনে মিলাদ-দোয়ার আয়োজন করা হয়। এরপরও তাদের ভয় কাটেনি, উল্টো তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তাদের হাতে আঁচড়ের দাগ পাওয়া গেছে। অসুস্থরা বলছে ভূতে আঁচড় দিয়েছে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আঁচড়টি কোনো মানুষের নাকি অন্য কোনো জন্তুর তা ডিএনএ পরীক্ষা করে বলা সম্ভব। তবে ছাত্রীরা এরই মধ্যে রিলিজ নিয়ে চলে গেছেন’।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. রাসেল বলেন, ‘হয়ত ছাত্রীরা নিজেরা নিজেরাই আঁচড় কেটেছে, আবার অন্য ঘটনাও থাকতে পারে। কলেজ থেকে অভিযোগ দেয়া হলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে’।
শহরের রুপাতলীতে অবস্থিত নার্সিং কলেজটি গতবছর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। গত জানুয়ারিতে কলেজ খুলেছে। সেখানে সব মিলিয়ে সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। একাডেমিক ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ছাত্রী হোস্টেলে ৫০ থেকে ৬০ জন বাস করেন।
ডিসি/এসআইকে/এমএসএ