কাপ্তাইয়ে বন্যহাতির আক্রমণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

মাহফুজ আলম, কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি >>>
বেড়াতে এসে হাতির আক্রমণে মারা গেছে বিশ্ববিদ্যলয়ের মেধাবি ছাত্র অভিষেক পাল।  রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় ৬ দিনের ব্যবধানে আবারো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।  বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বেলা ১১ টার দিকে কাপ্তাই উপজেলা থেকে রাঙামাটির আসামবস্তি এলাকায় যাওয়ার সড়কের কামাইল্যাছড়ি আগরবাগান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।  নিহত শিক্ষার্থী ঢাকা তেজগাঁও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বয়স হয়েছিল মাত্র ২১ বছর।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু সাদমান সোবহান উদয় জানান, বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকালে ৬ বন্ধু মিলে কাপ্তাইয়ের প্রশান্তি পার্ক হতে সিএনজি অটোরিকশাযোগে রাঙামাটি পর্যটন শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।  পথের মধ্যে ২টি হাতির মুখোমুখি পড়ে যায় তারা।  তার বন্ধু অভিষেক বনের মধ্য দিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় পেছন দিক থেকে গিয়ে একটি হাতি তাকে পিষ্ট করে।  খবর পেয়ে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, নিহত শিক্ষার্থীর পিতা সুধাংশু বিকাশ পাল চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।  খবর পেয়ে সাথে সাথে তার পিতা কাপ্তাইয়ে যান।  নিহত অভিষেকের বাড়ি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়।  অভিষেক পাল তার পরিবারের এক মাত্র ছেলে ছিলেন।  বর্তমানে অভিষেকের পরিবার-পরিজন ফেনীর মাস্টার পাড়ায় বসবাস করেন।
কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ওমর ফারুক রনি জানান, হাসপাতালে আনার আগেই অভিষেকের মৃত্যু হয়েছে।
বন বিভাগ কাপ্তাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মহসিন তালুকদার হাতির আক্রমণে অভিষেক পালের মৃত্যুর বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।  তিনি জানান, এর আগে গত ৭ মার্চ একই এলাকায় হাতির আক্রমণে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী প্রাণ হারান।
কাপ্তাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বন্য হাতির আক্রমণে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এঘটনা বন বিভাগ আমাকে অবগত করেছে। এব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।
ঘটনা জানার সাথে সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ডিএফও মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহানসহ আরো অনেকে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ডিএফও মো. রফিকুজ্জামান শাহ্ বলেন, বন্যহাতির আবাসস্থলে মানুষ দিন দিন স্থাপনা তৈরি করে বিরাণঅঞ্চলে পরিণত করেছে।  অন্যদিকে হাতি যে সব এলাকায় চড়ে বেড়াতো সেসব এলাকার গাছ পালাগুলোও কেটে ফেলেছে মানুষ।  বনে হাতি থাকে কিন্তু বন উজার করে দিয়েছে মানুষ।  অপরদিকে কিছু লোক হাতি দেখলে ওইসব হাতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রং তামাশা করে।  যার কারণে হাতি উত্তেজিত হয়ে মানুষের ক্ষতি করে।  এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুজ্জামান শাহ্ বলেন, হাতি ও মানুষের ক্ষতি নিরসনকল্পে করণীয় এবং বন্যপ্রাণীর আক্রমণে জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা ২০১০ এর আলোকে নিহত ব্যক্তি এক লক্ষ টাকা অনুদান পাবেন।  এছাড়াও ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএ