চেয়ারম্যান নির্বাচন করার সখ ২০৪৫ সালে, তাই আড়াই বছর বয়সেই নির্বাচনী শোডাউন !

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আড়াই বছরের শিশু আজমাইন হোসেন সরদার। এখনো স্পষ্টভাবে কথা বলতে শেখেনি। তবে সে ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। আগামি ২০৪৫ সালে নির্বাচনে প্রার্থী হবে সে। এজন্য নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে আগাম মোটরসাইকেল শোডাউনও করা হয়েছে।
ছেলের ইচ্ছা পূরণ করতে বাবার এমন ব্যতিক্রমী নির্বাচনী প্রচারণা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।
আজমাইন হোসেন সরদার নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ৮ নম্বর উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরগ্রাম গ্রামের আনিসার রহমান ও নুরমিলা জান্নাত দম্পতির ছোট ছেলে।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ২৬(১) ধারা মতে কোনো ব্যক্তি চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন (পরিশিষ্ট-ক) তখনই যদি তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হন, তার বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয় এবং চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের যেকোনো ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ থাকে।
জানা গেছে, আনিসার রহমান পেশায় একজন পিকআপ চালক। তার নিজস্ব একটি পিকআপ আছে। আছে কয়েক বিঘা ফসলি জমি। এছাড়া কয়েকটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন। স্ত্রী নুরমিলা জান্নাত গৃহিণী। তাদের তিন ছেলে মেয়ে। বড় মেয়ে রাহিমনির বয়স ১৩ বছর, ছেলে রাহিম সরদারের বয়স ৬ বছর এবং ছোট ছেলে সবার ছোট আজমাইন হোসেন সরদারের বয়স আড়াই বছর।
আজমাইন গায়ে পাঞ্জাবি ও গলায় ফুলের মালা পরে বাবা আনিসার রহমানের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সামনে বসে হাত নাড়ছে নেতাদের মতো। ভবিষ্যতে চেয়ারম্যান হওয়ার আগ্রহ নিয়ে শিশু বয়স থেকেই ছেলের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন তার বাবা। উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাডাউনও করা হয়েছে। ২৫ বছর পূর্ণ হলে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেবে আজমাইন এমনটাই আশা তার বাবার।
আজমাইন হোসেন সরদার জানায়, বাবাকে বলেছি চেয়ারম্যান হতে চাই। বাবা আমাকে হুন্ডায় করে ঘুরিয়েছে।
বাবা আনিসার রহমান বলেন, আমার ছোট ছেলে আজমাইন হোসেন সরদার ছোট। এখনো কথা স্পষ্টভাবে বলতে শেখেনি। গত ৬ ডিসেম্বর ছেলে আমাকে বলে, বাবা আমি চেয়ারম্যান হবো। আল্লাহ কখন কী করেন বলা যায় না। ছেলের ইচ্ছা পূরণ করতে গত ১০ ডিসেম্বর প্রায় দুই শতাধিক মোটরসাইকেল ও পিকআপ নিয়ে উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন এলাকায় শোডাউন দিয়েছি। পরে সন্ধ্যায় ভূরিভোজের আয়োজন করেছিলাম।
তিনি বলেন, আমি যদিও পিকআপ চালক কিন্তু তারপরও অনেকের জন্য শ্রম দিয়েছি ও সহযোগিতা করেছি। ফসল ফলানোর পাশাপাশি পুকুরের ব্যবসা করি। এলাকাবাসী আমাকে মেম্বার হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু আমি মেম্বার হতে আগ্রহী না। জনপ্রতিনিধি হলে আমার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আনিসার রহমান বলেন, আমার ইচ্ছা ছেলেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলবো, যেন এলাকাবাসীর জন্য কিছু করতে পারে। ছেলেকে আমার সাধ্যমতো তৈরি করার চেষ্টা করবো। সৎভাবেই উপার্জন করি। এলাকাবাসীও আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসে। ভবিষ্যতে ছেলেকে যেন ভালোভাবে বড় করতে পারি এবং এলাকাবাসীর কল্যাণে তাকে বিলিয়ে দিতে পারি এটাই আমার চাওয়া-পাওয়া।
তিনি বলেন, ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ইউপি নির্বাচনে শোডাউন করে যাবো পরিচিতি বাড়ানোর জন্য। আমার ছেলেকে সেভাবেই তৈরি করবো। বয়স পূর্ণ হলে নির্ভেজাল ও নতুন প্রজন্মের একটা চেয়ারম্যান উপহার দেবো। আমি যদি মারাও যাই এলাকাবাসী বিষয়টি জানবে এবং বয়স হওয়ার পর ভবিষ্যতে তাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাইবে।
স্থানীয় নিসাদ ও তারেক রহমানসহ কয়েকজন বলেন, ছেলে আজমাইনের ইচ্ছা পূরণ করতে তার বাবা আগাম নির্বাচনী প্রচারণা করছে। যেহেতু জনপ্রতিনিধি হতে চায় তাই আগে ছেলেকে শিক্ষিত করা দরকার। যখন বয়স হবে এবং এলাকায় পরিচিত ও মানুষের মন জয় করতে পারবে তখন চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে করি।
এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নওগাঁ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী বেলাল বলেন, উপযুক্ত মানুষ করে গড়ে তুলতে নাগরিক সমাজকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। যেহেতু বর্তমান শিশু আগামীর চেয়ারম্যান প্রার্থী, এলাকাবাসীও তার বিষয়ে আগে থেকেই অবগত থাকবে। নির্বাচনের সময় এলাকাবাসীরও প্রার্থী বেছে নিতে সুবিধা হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ