বিএম ডিপো পরিদর্শন করলেন ৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুড়ে যাওয়া বিএম ডিপো পরিদর্শন করেছেন সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা। এ সময় আগুন ও বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক জানিয়েছেন তারা। দিয়েছেন আহতদের চিকিৎসায় পাশে থাকার আশ্বাসও।
সেখানে সোমবার (৬ জুন) দুপুর ২ টায় যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বেলা ৩ টায় একসঙ্গে আসেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আর বিকেল ৫ টায় আসেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিপো পরিদর্শন শেষে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দেখতে। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি জানান, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় কারো দায় থাকলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো অপরাধকেই আমরা দায়মুক্ত বলি না। যে অপরাধ করছে, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগুনের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পর দোষীরা চিহ্নিত হবে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, যাদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বা এ ঘটনায় কারও বিন্দুমাত্র অবহেলা বা দায় থাকলে অবশ্যই তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে’।
পরিদর্শন শেষে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাদের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার সরকার নিয়েছে। যেখানে যা কিছু কিনতে হয় তার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। বিভাগীয় কমিশনার আমাদের জানিয়েছেন, প্রত্যেক রোগী সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাচ্ছে, কোথাও কোনো আর্থিক সংকট নেই। ওষুধ, খাবার-দাবারেরও কোনো সংকট নেই’।
আগুনে ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত শোকাহত। আমরা এতগুলো শিক্ষিত কর্মক্ষম মানুষ হারিয়েছি। এটা দেশের জন্য অনেক ক্ষতি। একইসঙ্গে রপ্তানিমুখী অনেক পণ্য নষ্ট হয়েছে। যাদের পণ্য নষ্ট হয়েছে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা তাদের প্রতিও সমবেদনা জানাই’।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটি রিপোর্ট দেয়ার পর আমার সেই রিপোর্ট বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স দেখাব। বড় একটা ক্ষতি হয়েছে যেটা আমাদের দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলছে। আমরা যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করি, সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আপনাদেরও যেমন প্রশ্ন আছে, আমারও কিছু প্রশ্ন আছে’।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঘটনাস্থল ঘুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসাধীনদের খোঁজ নেন।
যা ঘটেছিল
নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানাধীন (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপো সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায়। সেখানে গত শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আগুন লাগে। একে একে ছুটে যায় চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেও পরে যোগ দেয় কয়েকটি ইউনিট। রবিবার সকাল পর্যন্ত আগুন নেভাতে আসা ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫টি।
কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণে বাড়ে আগুনের ভয়াবহতা। রবিবার সকালে আগুন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে এলেও নেভেনি। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ও সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানি সোমবার আগুন নেভাতে কাজ করছে। আগুন ও বিস্ফোরণে রবিবার পর্যন্ত প্রশাসন ৪৫ জন নিহতের তথ্য দিলেও সোমবার জানিয়েছে মৃতের সংখ্যা ৪১।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান সোমবার বলেন, ‘একাধিক হাসপাতালে মরদেহ থাকায় গণনায় ভুল হয়েছে। একই মরদেহ দুবার কাউন্ট হয়েছে। পরে সবগুলো মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রকৃত সংখ্যা ৪১ জন পাওয়া গেছে’। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
যে কারণে আগুন
আগুনের ভয়াবহতা আর বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ডিপোর কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিক অ্যাভিয়েশন শিল্প খাতে ব্যবহার করা হয়। উচ্চ চাপে এই রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়ে থাকে। রপ্তানির জন্য কন্টেইনারে করে এই রাসায়নিক বিএম ডিপোতে রাখা ছিল।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডিপোর কর্মকর্তাদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। তবে প্রথমে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ অবহিত করেনি। এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে’।
আগুনের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপমহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবারাত ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দিতে এবং নিহত ও আহত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যের আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এ দুর্ঘটনায় সার্বিক শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক এস এম এনামুল হক তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছেন।
সোমবার (৬ জুন) বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারাও দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি করেছে।

ডিসি/এসআইকে/সিসি