সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৮

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে আহত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।  এ নিয়ে মৃত বেড়ে দাঁড়াল ৪৮-এ।  নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালে রবিবার (১২ জুন) দুপুর ১ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত নুরুল কাদের বাঁশখালীর খেজুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
পার্কভিউ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. রাশেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুপুর ১ টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়েছে।  তার মরদেহ এখনও হাসপাতালে রয়েছে’।
এদিন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ফায়ার সার্ভিসকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।  এই নিয়ে একটি আগুনের ঘটনায় সর্বোচ্চ ১০ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী প্রাণ হারালেন।
গত ৪ জুন (শনিবার) রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ফায়ার সার্ভিসকর্মী গাউসুল আজম ৮ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যান।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত গাউসুল আজম মারা গেছেন।  শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ৩ টার দিকে তিনি মারা যান’।
শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া গাউসুল আজম গেল ৯ জুন থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।  তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
গত ৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে কুর্মিটোলা পুরাতন বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফায়ার ফাইটারদের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
গাউসুল আজমের গ্রামের বাড়ি যশোরে।  বাবার নাম আজগর গাজী।  চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন তিনি।
নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানাধীন (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপো সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায়।  সেখানে গত শনিবার রাত ৯ টার দিকে আগুন লাগে।  একে একে ছুটে যায় চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট।  নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেও পরে যোগ দেয় কয়েকটি ইউনিট।  রবিবার সকাল পর্যন্ত আগুন নেভাতে আসা ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫টি।  কিন্তু কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণে বাড়ে আগুনের ভয়াবহতা।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, শনিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় তারা।  এরপর তাদের আটটি ইউনিট কাজ শুরু করে।  কিছু পরে ঘটনাস্থলে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের আরও সাতটি ইউনিট।
গত ৫ জুন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, নিহতদের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।  বাকিদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান গত রবিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, আগুনের ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৪৬ জন।  তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ টাকার চেক দেয়া হবে।  আজ ১৩ জনের পরিবারকে এই টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।  জেলা প্রশাসন থেকে নিহতদের ৫০ হাজার ও আহতদের ২৫ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে’।
৮৭ ঘণ্টা পর ৮ জুন দুপুরে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন নেভে।  সাংবাদিকদের বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল।

ডিসি/এসআইকে/সিসি