রাঙ্গুনিয়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় অঙ্গার একই পরিবারের ৫ জন

উত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ঘরে আগুন লেগে ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের পাঁচ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন জানিয়েছে, চুলা থেকে সৃষ্ট আগুন ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছেন তারা।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ভোরগত রাত ২ টার দিকে উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- মহাজন পাড়ার অটোরিকশাচালক খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললীতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকী বসাক (৩২), ছেলে শৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শয়ন্তী বসাক (৪)। এ ঘটনায় দগ্ধ একমাত্র বেঁচে থাকা খোকন বসাককে (৪২) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ জানান, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে চুলার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। বসতঘর লাগোয়া রান্নাঘরে অনেক লাকড়ি মজুদ ছিল। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বের হওয়ার দরজা ছিল মাত্র একটি। পরিবারের সদস্যরা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় আগুন লাগার বিষয়টি অনেক পরে টের পান। ঘরের সব দরজা বন্ধ থাকায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে’।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে নশকতা নয়, চুলার আগুন থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে। সেমিপাকা ঘরটিতে বের হওয়ার দরজা ছিল মাত্র একটি। এছাড়া দুই কক্ষের যে দরজা ছিল সেগুলোও লোহার। আগুনের কারণে দরজাগুলো গরম হয়ে যায়। এ কারণে খোলা যায়নি। ঘরের ভেতর লাকড়ি মজুত থাকায় সেগুলোতে আগুন ধরে ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি আগুন ঘরের সঙ্গে লাগানো সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ধরে যায়। এ কারণে ঘর থেকে বের হওয়া আরও বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। সব দিক বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, আগুনের ঘটনা নাশকতা নয়, চুলার আগুন থেকেই এটি ঘটেছে’।
তিনি আরও জানান, ‘আগুনে নিহত পাঁচ জনকে সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। খোকন বসাকের একটি অটোরিকশা পুড়ে গেছে। তাই তাকে একটি নতুন অটোরিকশা কিনে দেওয়া ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগঠন থেকেও আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে’।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপপরিচালক আনিসুর রহমান জানান, রাত ২টা ১০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ভোর ৪ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেমিপাকা ঘরটির রান্নাঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, বসতঘরের জানালার গ্রিল কেটে আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুনে খোকন বসাকের অটোরিকশাটিও ভস্মীভূত হয়েছে।
অটোরিকশাচালক খোকন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেমিপাকা ঘরে বসবাস করতেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরটিতে বের হওয়ার দরজা ছিল মাত্র একটি। স্থানীয়দের ধারণা, রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন লেগে সেখানে মজুতকৃত বিপুল পরিমাণ কাঠের লাকড়ির মাধ্যমে তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসিসহ পুলিশ ফোর্স এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে।
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিলকী বলেন, ‘খোকন বসাকের ডান হাত এবং পিঠ পুড়ে গেছে। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, খোকনের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক’।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর