খোকনের আর কেউ রইলো না

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ঘরে আগুন লেগে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেছেন অটোরিকশাচালক খোকন বসাকের (৪২) মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। তবে এই খবর তিনি এখনও পাননি। কারণ একই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন খোকন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২ টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মধ্যরাতে আগুনে পুড়ে মারা যান পাঁচ জন।
এই ঘটনায় মৃতরা হলেন মহাজন পাড়ার অটোরিকশাচালক খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললীতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকী বসাক (৩২), ছেলে শৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শয়ন্তী বসাক (৪)। দগ্ধ খোকন বসাককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন খোকন বসাক। তার পরিবারের কেউ যে আর বেঁচে নেই এই খবর তাকে দেওয়া হয়নি।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, অগ্নিদগ্ধ খোকন হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীর ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। তিনি শঙ্কামুক্ত নন। কথা বলতে পারছেন না। তার চিকিৎসা চলছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘অটোরিকশাচালক খোকন বসাকের মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান মারা গেছেন। তার অবস্থাও গুরুতর। খোকন এখনও জানেন না তার পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই। এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন লাগার কারণে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। খোকন গায়ে আগুন নিয়ে বের হয়েছিল’।
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিলকী জানান, খোকন বসাকের ডান হাত ও পিঠ পুড়ে গেছে। তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপপরিচালক আনিসুর রহমান জানান, রাত ২টা ১০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ভোর ৪ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেমিপাকা ঘরটির রান্নাঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, বসতঘরের জানালার গ্রিল কেটে আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুনে খোকন বসাকের অটোরিকশাটিও ভস্মীভূত হয়েছে।
অটোরিকশাচালক খোকন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেমিপাকা ঘরে বসবাস করতেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরটিতে বের হওয়ার দরজা ছিল মাত্র একটি। স্থানীয়দের ধারণা, রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন লেগে সেখানে মজুতকৃত বিপুল পরিমাণ কাঠের লাকড়ির মাধ্যমে তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসিসহ পুলিশ ফোর্স এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর