ঝড়ে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই : প্রতিমন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে নিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
সোমবার (১৫ মে) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ঝড়ে আমাদের সিগনিফিক্যান্ট কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই। যেভাবে এটার পূর্বাভাস ছিল সেই অনুযায়ী কিছু হয় নাই”।
এনামুর রহমান বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে পেরেছিলাম, যার জন্য হতাহতের খবর পাওয়া যায় নাই। বাংলাদেশ এই প্রথম কোনো ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করল, যেখানে কোনো মৃত্যু সংবাদ নাই। সেকারণেই আমরা এটাকে বিশাল সফলতা বলছি। কারণ প্রাণহানিটাই আমাদের বড় লস। সবকিছু রিকভার করা যায়, কিন্তু মানুষের প্রাণকে ফিরিয়ে আনা যায় না”।
টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে গত সপ্তাহে সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। সোমবার সকালে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এ ঝড় সোমবার বিকালের পর পুরোপুরি স্থলভাবে উঠে আসে এবং বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজারে সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে ১২ সহস্রাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সোয়া ৩ লাখ মানুষ।
এছাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আড়াই হাজার ঘর ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ১২০০ মতো ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপড়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী এনামুর জানান, প্রাণহানি না হলেও ঝড়ে অনেক গাছপালা পড়ে গেছে। ঘরবাড়িও বিধ্বস্ত হয়েছে। টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিনে ২০০০ এর মতো ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে শুধু সেন্টমার্টিনেই ১২০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আর সবমিলিয়ে ১০,০০০ এর মতো ঘরবাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ চাপা পড়ে কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আর কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আমরা পাই নাই।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ঝড়ে যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদেরকে টিন এবং গৃহ নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্গতদের নিরাপদ পানি, ড্রাই কেক, খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মাঠপর্যায় থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা পাঠানো হবে। এছাড়া, আমাদের জেলাগুলোতে মানবিক সহায়তা মজুদ থাকে। একান্ত জরুরি হলে সেখান থেকে সরবরাহ করা হবে। যেমন, জেলা প্রশাসকের কাছে ২০০ বাণ্ডিল করে টিন থাকে, ১০ লক্ষ টাকা থাকে, ২০০ মেট্রিক টন চাল থাকে, ২০০০ প্যাকেট খাবার থাকে। এখান থেকে তারা জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারবে”।
সহায়তা কবে নাগাদ মানুষের হাতে পৌঁছাবে জানতে চাইলে তিনি বলে, রিপোর্ট আসতে প্রায় ২ সপ্তাহ সময় লাগে। রিপোর্ট হাতে এলে ৩ সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটা সভা হবে। মাঠ থেকে লস অ্যান্ড ড্যামেজের যে রিপোর্ট আসবে, সেটা পাওয়ার পরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় লস অ্যান্ড ড্যামেজ রিকভারি এবং রিহ্যাবিলিটেশনের জন্য কাজ করবে।
রাস্তায় যেসব গাছ পড়ে ছিল, সেগুলো কেটে ইতোমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ