বন্দর নগরী সত্যিই পানির নগর!

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
থই থই পানিতে জ্বল জ্বল করছে চট্টগ্রাম নগর। বন্দর নগরী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত চট্টগ্রাম যেন সত্যিকার অর্থেই পানির নগরীতে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব এলাকাতেই টানা বর্ষণে পানির জটে পড়েছেন নগরবাসী। ঘরে-বাইরে সবখানেই হাঁটুতে থেকে কোমড়, কোথাও কোথাও বুক সমান পানিতে হাতরেছেন তারা।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩০৬ মিলিমি টার বৃষ্টিপাতে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড হওয়া পানিতেই জন দুর্ভোগ বেড়েছে বন্দরবাসীর।
অতি ভারি বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ এলাকা রবিবার (৬ আগস্ট) দিনভর ছিল জলমগ্ন। আগামি দুদিন এমন বৃষ্টি চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এমন পরিস্থিতি চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমি ধসের শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্ক বার্তায়।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন শনিবার রাতে ও রবিবার (৬ আগস্ট) দিনভর নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারী প্রায় ৮০০ পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্দর নগরীতে টানা ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার সকালে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে জোয়ারের পানিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকালে নগরীর লালখান বাজার টাইগার পাস সড়কের পার্শ্ববর্তী একটি পাহাড় ধসে পড়ে চলন্ত একটি মাইক্রোবাসের উপর। এতে কেউ হতাহত না হলেও কয়েক ঘণ্টা ওই সড়কের টাইগারপাসমুখী অংশের যান চলাচল বন্ধ ছিল।
ছবি সংগৃহিতশনিবারও নগরীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল। তবে তা শুক্রবারের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তবে কিছু নিচু এলাকা থেকে আগের দিন ওঠা পানি আর নামেনি। শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীতে টানা বর্ষণ চলতে থাকে। রবিবার (৬ আগস্ট) বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২২০ মিলিমি টার।
ইতোপূর্বে বন্দর নগরীতে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন সময় পাহাড় ধস ও প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে বিগত বছরগুলোতে।
আজ রবিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, নগরীর আকবর শাহ এলাকার বিজয় নগর, ঝিল-১, ২ ও ৩, শান্তিনগর, বেলতলী ঘোনা এবং মতিঝর্ণা থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫০ পরিবারকে সরানো হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে ২৫০ পরিবারকে সরানো হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০০ পরিবার অবস্থান করছে। বাকিরা আত্মীয় স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দুপুর ও রাতের খাবার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উমর ফারুক বলেন, ‘তাদের সরিয়ে নেওয়া হলেও তারা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। আমরাও নজরদারি রেখেছি। যাতে কেউ ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে থাকতে না পারে। আজ রাতেও আমরা বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা পরিদর্শন করব। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে আছে এমন কাউকে পাওয়া গেলে সরিয়ে নেওয়া হবে’।
শনিবার রাতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আকবরশাহ এলাকার বিজয় নগর ও ঝিল পাহাড়গুলোতে অভিযানে অংশ নেন।
এদিকে নগরীকে ৬টি সার্কেলে ভাগ করে মানুষের জানমাল রক্ষায় জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম কাজ করছে। মাইকিং করে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
চট্টগ্রামের সব পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত পরিবারকে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্যে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন নগরীতে পানিবন্দি ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা জালালাবাদ, পশ্চিম ষোলশহর, উত্তর পাহাড়তলী, পূর্ব পাহাড়তলী, লালখান বাজার ও চকবাজার ওয়ার্ডের ৩০০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ এলাকায় সরে যাওয়ার আহবান জানিয়ে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকার পরও পাহাড়ের উপরে ও পাদদেশে বসবাস করছেন। এভাবে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করা জনগণের প্রতি আহবান আপনারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। আপনাদের জন্য খাবার, স্বাস্থ্যসেবা থেকে সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা পানিবন্দি এলাকাগুলোতে বিতরণের জন্য ১০ হাজার মানুষের জন্য খাবার প্রস্তুত রেখেছি’।
২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবুবাগান, বায়েজিদ বোস্তামী, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাপড়সহ সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা যায় শিশু-নারী ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের ১২৭ জন।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর