টানা বৃষ্টিতে তিন দিন পানির নিচে চট্টগ্রাম

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কিছু এলাকা। কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও তা কোমর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। কেউ ইট দিয়ে খাট উঁচু করে তাতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিছু বাসায় চুলা জ্বালানোর পরিস্থিতিও নেই। কেউ কেউ টেবিল-চেয়ারের ওপর চুলা বসিয়ে রান্নার চেষ্টা করছেন। ঘরবাড়ির পাশাপাশি বন্দরনগরীর অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়েছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন অভিভাবকরা। কোনো কোনো বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। দুর্ভোগের অন্ত ছিল না কর্মস্থলগামী লোকজনের।
টানা বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার, বাকলিয়া ডিসি রোড, নাসিরাবাদ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, হালিশহর, জামালখান, সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ নগরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে রয়েছে। কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুকসমান পানি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নগরীর খাল-নালাগুলো বর্জ্য ও মাটিতে ভরাট হয়ে আছে। যার কারণে পানি নামতে পারছে না। আবার স্লুইসগেটগুলো চালু না হওয়ায় জোয়ারের পানিও ঢুকে পড়ছে। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রবিবার সকালে নগরের পাঁচলাইশ থানার মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির নিচতলা পানিতে ডুবে আছে। এখানকার বাসিন্দা সুপ্তা বড়ুয়া বলেন, ‘এই এলাকায় আছি ১৩-১৪ বছর। এ রকম পানি আগে কখনও দেখিনি’।
নগরের প্রবর্তক, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, শুলকবহর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, কাপাসগোলা, চকবাজার, ডিসি রোড ও বাকলিয়া এলাকায় রাস্তাঘাটে পানিতে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন যাত্রীরা। অনেকে রিকশা-ভ্যানে গন্তব্যে পৌঁছান।
নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা ব্যাংকার আবদুল হাকিম বলেন, ‘গত দুই দিন বন্ধ ছিল, তাই অফিসে যেতে হয়নি। আজ সকালে বের হয়ে দেখি, পানি আরও বেড়েছে। প্রায় কোমরপানি। গাড়ি নেই। হেঁটেই আগ্রাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। পানি শেষ করে তার পর হয়তো গাড়ি পাব’।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের এক কিলোমিটার থেকে নাসিরাবাদ পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক হাঁটুপানিতে ডুবে ছিল।
পথে পথে আটকা পড়তে দেখা যায় কয়েকশ যানবাহন, বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোর ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অচল হয়ে পড়ে। সড়কের দু’পাশে দোকানগুলো বন্ধ ছিল। অনেক ব্যবসায়ীকে দোকান থেকে পানি নিষ্কাশন করতে দেখা যায়।
জলাবদ্ধতা হলেই পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ব্যয়ও হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে সিডিএ। এ বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে। নির্মাণকাজের জন্য খালে দেওয়া বাঁধগুলো অপসারণ করা হলেও এখনও মাটি রয়ে গেছে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে’। তবে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন নালা-নর্দমাগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করছে না। যার কারণে নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে জলাবদ্ধতা বেশি হচ্ছে’।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর