খানাখন্দে বাঁশখালীর পুঁইছুড়ি-ছনুয়া সড়ক, জনদুর্ভোগ

মুহম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
জনদুর্ভোগের আরেক নাম বাঁশখালী উপজেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত পুঁইছুড়ি ইউনিয়নের প্রেম বাজার থেকে ছনুয়া সড়ক।  ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দে সড়কটি এখন জনসাধারণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।  দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কারবিহীন থাকায় বর্তমানে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এর ব্যবহারকারীরা।  নানান কারণে ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এই ইউনিয়নটি অনেকটা স্বাবলম্বী হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক পিছিয়ে।  পুঁইছড়ি-ছনুয়া সংযোগ সড়কটি পুঁইছড়ি ও ছনুয়াবাসীর সাথে সাথে সাগর উপকূলীয় কুতুবদিয়াবাসীর যাতায়াতেরও বিকল্প সড়ক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের অধিকাংশ স্থানে বিশাল বিশাল গর্ত ও পানি জমে আছে।  ফলে সাধারণ জনগণকে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।  এছাড়া হাতে গোনা দুয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করলেও অধিকাংশ গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভেঙে যাওয়ায় এই সড়ক দিয়ে চলাচলে রাজি হয় না।  বর্তমানে রাস্তাটির অবস্থা এতই যে খারাপ যেন কোমর ভেঙে যাওয়ার অবস্থা।  এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কুতুবদিয়া, চকরিয়া, ছনুয়া ও পেকুয়া রাজাখালী এলাকায় যাতায়াত করে।  বর্তমানে সড়কটির প্রায় স্থানে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে- এমন সব খানাখন্দে বিস্তৃত।  প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।  এরমধ্য সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলের একেবারে অযোগ্য হয়ে যায়।
এই বেহাল দশার কারণে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে প্রায় ৯৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭০ মিটার লম্বা এইচবি ঢালাই এবং ১ কিলোমিটার কার্পেটিং করা হয়েছিল।  কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই পূর্বের অবস্থায় পরিণত হয়।  বর্তমানে চলমান বর্ষা মৌসুমে সাধারণ মানুষের সেই দুর্ভোগ এখন তিনগুণ বেড়েছে।  পুঁইছড়ি ও ছনুয়ার সাধারণ মানুষ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দ্রুত এই সড়কটি সংস্কার করে দিতে অনুরোধ করেছেন।
পুঁইছুড়ি ইউনিয়নের সরলিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, আমাদের এলাকায় প্রবল বর্ষণের কারণে অতিরিক্ত পাহাড়ি ঢল নামায় পুরো পশ্চিম পুঁইছুড়ি পানিতে থৈ থৈ।  এলাকার একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম সরলিয়া বাজার সড়কটিও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ে আছে।  অতিবৃষ্টির পানিতে সড়কের দুই পাশের মাটি সরে যাচ্ছে।  সড়কটি সংস্কারবিহীন থাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  এরমধ্যে বৃষ্টির পানি যোগ হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগের মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছে।
পুঁইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোলতানুল গনি চৌধুরী (লেদু মিয়া) দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক।  আমি জেলা সমন্বয় সভায় এবং আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বেশ কয়েকবার রাস্তাটির দুর্দশার কথা তুলে ধরেছি।  এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কুতুবদিয়া, চকরিয়া, রাজখালী, ছনুয়া এলাকায় যাতায়াত করেন।  সড়কটির এমন অবস্থার ফলে মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে গেছে।  এটি সংস্কার করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।  কারণ এই রাস্তাটি এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  আমি সংস্কার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে বেশ কয়েকটি আবেদন দিয়েছি।  বরাদ্দ না আসায় বাধ্য হয়ে ছোট খাট গর্তগুলো ভরাট করার জন্য পরিষদের ১% বরাদ্দ থেকে কাজ শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আমার ইউনিয়ন ছনুয়া-শেখেরখীলের জলকদর খালের উপর স্থাপিত সেতু নষ্ট হয়ে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হওয়ায় ব্রিজটির কাজ চলছে।  ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বাঁশখালীর উপকূলীয় ব্রিজগুলো সংস্কার করা হয় ১৯৯৫ সালে।  এরপর থেকে এই ব্রিজের উপর দিকে লবণ পরিবহন থেকে শুরু করে সকল ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করতে গিয়ে ব্রিজটি নষ্ট হয়ে যায়।  পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে চলাচল রক্ষা করার জন্য স্টীল ব্রিজ নষ্ট হওয়ায় কাঠ দিয়ে তৈরি ব্রিজ দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে।  শেখেরখীল-ছনুয়া মধ্যবর্তী সীমানায় জলকদর খালের উপর ৩৬ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডারসমৃদ্ধ ও মৌলভীবাজার ব্রিজটি ৩ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।  গত বছরের ২০ ফ্রেরুয়ারির মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।  বর্তমানে এই কাঠের ব্রিজটি খুলে নতুন ব্রিজ নির্মাণের কাজ করায় সকল ধরনের যানবাহন প্রেম বাজার সরলিয়া সড়ক দিয়ে চলাচল করে।  পাশাপাশি কুতুবদিয়ার মানুষও এই রাস্তাটি ব্যবহার করে।  অনেকেই রাস্তার বেহাল অবস্থার কারনে প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন করতে পারছে না।  তাই এই ব্রিজটির সংস্কার কাজ চলায় প্রেমবাজারের সরলিয়া সড়কটি ব্যবহারে বিভিন্ন দুর্ঘটনসহ এলাকাবাসী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, পুঁইছুড়ি প্রেমবাজার থেকে ছনুয়া পর্যন্ত গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে প্রায় ৯৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭০ মিটার এইচবি ঢালাই এবং ১ কিলোমিটার কার্পেটিং কাজ সম্পাদন হয়েছিল।  অল্প সময়ে আবারো সড়কটি নষ্ট হওয়ার কারণ হচ্ছে যেখানে সেখানে করাত কলের বড় বড় কাঠ বোঝাই করে আনা-নেয়া।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ