দৈনিক পাঁচটন মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংস করবে ইনসিনারেটর প্ল্যান্ট

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সংক্রামক মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসে ইনসিনারেটর প্ল্যান্ট বসিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) নগরের হালিশহর আনন্দবাজার আবর্জনাগারের পাশে প্ল্যান্টটির উদ্বোধন করা হয়।
দেশের শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামই প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক এই প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা জানিয়েছেন। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় স্থাপিত এই প্ল্যান্টে দৈনিক পাঁচ টন মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানো যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম বলেন, সংক্রামক মেডিকেল বর্জ্য নিষ্কাশনে গুরুত্ব দিয়ে ইনসিনারেটর প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এই প্ল্যান্টে দৈনিক পাঁচ টন মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংস করা যাবে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। নগরের হাসপাতালগুলো তাদের বর্জ্য অটোক্লেভ মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তা বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগে ভরে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের দেবেন।
তিনি বলেন, করোনার এই সময়ে যেভাবে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে, তাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও শিল্প বর্জ্যের কিছু অংশ ভাগাড়ে এবং কিছু নালা-নর্দমার মাধ্যমে নদী-সমুদ্রে গিয়ে পড়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
চসিক মেয়র বলেন, চসিককে বর্জ্য বিশোধনের চার্জ দিয়ে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসে এই প্ল্যান্টটি ব্যবহার করবে। জাইকার তিন কোটি টাকা ও চসিকের ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্ল্যান্টটিতে মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানো হবে পরিবেশসম্মত উপায়ে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে, অন্যদিকে সংগৃহীত মেডিকেল বর্জ্যের কারণে যে সংক্রামক রোগ ছড়ায় তাও অনেকাংশে কমবে।
চসিক মেয়র জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ জাইকার প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান। তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখলে অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি নগর। এই নগরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। এই নগরের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম জাপান সফর করে জাপানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্ক এখনো অব্যাহত আছে।
নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এই প্ল্যান্ট যথেষ্ট অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী বলেন, ‘দেশের শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামই মেডিকেল বর্জ্য বিশোধনে প্রথমবারের মতো ইনসিনারেটর প্লান্ট বসিয়েছে। যার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম একটি পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে উঠবে’।
জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হাইয়াকাওয়া ইয়োহো বলেন, ‘জাইকার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থাপিত ইনসিনারেটর প্লান্ট পরিবেশসম্মত উপায়ে ধোঁয়াবিহীন চুলার মাধ্যমে বর্জ্য বিশোধন করবে। উচ্চ তাপমাত্রায় এই বর্জ্য বিশোধন করা হবে। এই প্লান্টটি পরিচালনা করতে জাইকার বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। এছাড়াও প্লান্ট পরিচালনা করতে চসিক সেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে’।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল, জাইকার সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ সাইকি তাকাশি, চসিকের প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর মো. আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক মো. ইসমাইল, মো. ইলিয়াস, চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর