লোহাগাড়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট

ফাইল ছবি

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দক্ষিণ চট্টগ্রামের শেষপ্রান্তের লোহাগাড়া উপজেলাজুড়ে সুপেয় পানির তীব্র সংকট চলছে।  ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার অধিবাসীরা।  চারদিকে নদী, খাল, বিল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় পানির এই সংকট বলে জানা গেছে।  এছাড়াও পানি পাওয়া যাচ্ছে না অগভীর নলকূপেও।  দীর্ঘ সময় ধরে অগভীর নলকূপ চেপে শরীরের ঘাম ঝরালেও উঠছে না চাহিদামত পানি।  যেসব মোটর দ্বারা গভীর নলকূপে পানি উত্তোলনের চেষ্টা করা হলেও তাতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না পানি।
লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ছিদ্দিকিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা, হেফজ ও এতিমখানায় তিনটি নলকূপের মধ্যে দুটিই অচল প্রায় দেড়মাস যাবত।  একটির হাতল দীর্ঘক্ষণ চাপাচাপির পর সামান্য পানি পাওয়া যায়।
স্থানীয় চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. হেলাল উদ্দীন জানান, শুধু এ মাদ্রাসা নয়, চরম্বা ইউনিয়নের প্রায় সব অগভীর নলক‚পগুলোতে পানি উঠছে না।  তিনি আরও জানান, এলাকার বোরো চাষীরাও পানির সংকটে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
শিক্ষক নেতা ও পদুয়া গুপ্ত বাড়ির সুনীল কুমার চৌধুরী জানান, তার এলাকার গভীর নলক‚পে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।  উপজেলার টংকাবতি নদীর রাবারড্যামে পানি কমে গেছে।  ফলে বোরো চাষীরা আতংকে দিনাতিপাত করছে।  আগামি ২ সাপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে এলাকার বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
এ প্রসঙ্গে লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পুরো এলাকায় বোরো চাষীরা সংকটে আছে।  উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের রবি ফসল মরে যাচ্ছে পানির অভাবে।  লোহাগাড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ডলুখাল মরাগাঙ্গে পরিণত হয়েছে।  উজান থেকে পানির প্রবাহ নেই।  এছাড়াও উপজেলার সুখছড়ি খাল, হাতিয়াখাল, পাগলীখাল, জাংছড়ি ও হাঙ্গরখালসহ এলাকার ছড়াগুলো একেবারে শুকিয়ে গেছে।  উজান থেকে পানির প্রবাহ নেই।  উপজেলার ছোট ছোট পুকুরগুলোর পানি শুকিয়ে গেছে।  অনেক পুকুরের পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।  এতে পারিবারিক দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
আধুনগর ইউনিয়নের কুলপাগলী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়ও পানির সংকটে ভ‚গছেন বাসিন্দারা।  আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা লাকী আক্তার জানান, অত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬টি ব্যারাকে ৬০টি পরিবারের বসবাস।  প্রতি ১০ পরিবারে জন্য ১টি করে নলকূপ থাকলেও ৪ টিতেই পানি পাওয়া যাচ্ছে না।  অপর দুটিতে এক কলসী পানির জন্য দীর্ঘক্ষণ হাতল চাপতে হয়।  বিশেষ করে মহিলাদের কাজে ব্যবহারের পানির জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
লোহাগাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দীন জানান, শুষ্কমৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।  বর্ষামৌসুমে বৃষ্টিপাত হলে এ সমস্যা থাকবে না।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের ফিল্ড সুপারভাইজার কামরুল হুদা জানান, লোহাগাড়া উপজেলায় জনস্বাস্থ্য বিভাগের স্থাপিত ৫১৫টি অগভীর নলকূপ রয়েছে।  এর মধ্যে সম্পূর্ণ অচল ৩৯টি। গভীর নলকুপ রয়েছে ২ হাজার ৬৭৪টি এবং তারা পাইপ রয়েছে ৩৬৩টি।  এছাড়াও অনেক পরিবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অগভীর ও গভীর নলকূপ রয়েছে।  যেসব গভীর নলকূপে সাবমার্সিবল মোটর রয়েছে, সেসব গভীর নলকূপে পানি সমস্যা নেই।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ