কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খননের দাবিতে মানববন্ধন

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
উচ্চ আদালদের আদেশ অনুযায়ী মাছ বাজারসহ কর্ণফুলী নদীতীরের ১৮ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদী খননের দাবিতে নদীর তীরে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনসহ পাঁচ সংগঠন।  রবিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে চাক্তাই খালের মোহনায় এ মানববন্ধন হয়।
এতে বক্তারা বলেন, মরতে বসেছে কর্ণফুলী। প্রায় ২৫০ মিটার নদী দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ মাছ বাজার ও বরফ কল।  বন্দর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের চলমান কর্ণফুলী গভীরতা পরিমাপ জরিপে দেখা গেছে মাছ বাজার থেকে আরো প্রায় ৩০০ মিটার দক্ষিণে অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মাঝ বরাবর প্রায় তিন কিলোমিটারব্যাপী বিরাট চর জেগে উঠেছে।  যে কারণে এই স্থানে নদীর চলমান ধারা ৩০০ থেকে ৩৫০ মিটার মাত্র।  কিন্তু ২০১৪ সালের এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত কর্ণফুলী রক্ষায় পরিচালিত স্ট্র্যাটেজিক মাস্টার প্লানে নদীর প্রশস্থতা ছিল ৯৩৫ মিটার প্রায় ।
আজ কর্ণফুলী সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় শাহ আমানত সেতুর মাঝ পিলার বরার ভাটার সময় জেগে উঠা চরে মাছ ধরছেন জেলেরা।  চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় মাছ বাজার স্থাপিত হওয়ায় কর্ণফুলী নদী অর্ধেকের বেশি ভরাট হয়ে গেছে।  জরিপে দেখা যায় এই স্থানে নদীর মাঝখানে পানির গভীরতা দুই থেকে আড়াই মিটার।
মানববন্ধনে কর্ণফুলী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি খননের নামে লুকোচুরি খেলা চলছে।  কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের নামে যা করা হচ্ছে তা রীতিমতো ছেলেখেলা।  ক্যাপিটাল ড্রেজিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।  কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চরে কুকুর মরা মাছ এবং কাঁকড়া খেয়ে বেড়াচ্ছে।  এ অবস্থা কিছুতেই চলতে দেওয়া যায় না।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ বলেছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন ২১৮১ স্থাপনার মধ্যে তিন শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে নীরবে বসে আছেন।  আমরা চাই কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে উঠা সব অবৈধ স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ করে শাহ আমানত ব্রিজ থেকে ফিরিঙ্গিবাজার পর্যন্ত কর্ণফুলী পরিকল্পিত ভাবে খনন করা হোক।  অন্যতায় আমরা চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ঈদের পরে ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করে মাননীয় হাইকোর্টে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রার্থনা করা হবে।
মেরিন ফিশারিজ একাডেমির প্রফেসর (খণ্ডকালীন) নোমান আহমেদ সিদ্দিকি বলেছেন, বন্দর এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী দেশের অর্থনীতির সঞ্চালক।  কর্ণফুলী রক্ষায় বন্দর, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।  দেশের অন্যান্য স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম দেখা গেলেও কর্ণফুলীর ব্যাপারে এই প্রতিষ্ঠান নীরব দর্শক।
মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, গ্রামীণ পরিবেশ ও কৃষ্টি উন্নয়ন সমাজ সৃষ্টি, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন ও ইউনাইডেট সোশ্যাল নেটওয়ার্ক । বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, যুগ্ম সাধারণ অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মনির উদ্দিন, শ্যামল বিশ্বাস, সংস্কৃতিকর্মী দিলরুবা খানম, অ্যাডভোটেক সেলিম চৌধুরী, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এসএম পেয়ার আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমেদ, সদস্য আবুল হোসেন আবুল, জসীম উদ্দিন প্রমুখ।

ডিসি/এসআইকে/আরসি