চলতি দশকেই বছরে ৬০০ ভয়াবহ দুর্যোগ দেখবে বিশ্ববাসী : জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পৃথিবী।  যার ফলে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যাও।  এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বিষয়গুলো দ্রুত অনুধাবন করতে না পারলে দুর্যোগ ও বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনবিষয়ক দপ্তরের (ইউএনডিআরআর) পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ দুই দশকে প্রতিবছর ৩৫০ থেকে ৫০০টি মধ্যম থেকে ভয়াবহ দুর্যোগের শিকার হয়েছে বিশ্ববাসী।  এটি আগের তিন দশকের গড় দুর্যোগের তুলনায় পাঁচ গুণের বেশি।
এসব দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ খরা, বন্যা, বাড়তি তাপমাত্রা।  আশঙ্কার বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে ঘন ঘন এসব দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আগামি দিনগুলোয় এ ধরনের দুর্যোগ আরও বাড়তে পারে।  প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি দশক অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে এমন দুর্যোগের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে বছরে ৫৬০টিতে; যা দৈনিক গড়ে দুটির কাছাকাছি।
এক বিবৃতিতে ইউএনডিআরআর বলেছে, বিশ্বজুড়ে দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় একটি কারণ, দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধিগত সমস্যা।  অনেক সময় ঝুঁকির বিষয়গুলো ঠিকমতো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।  অনেকেই মনে করেন, তাঁরা সহজেই দুর্যোগ জয় করতে পারবেন।  এমনকি অনেক সময় সাংগঠনিক কিংবা রাষ্ট্রীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও এমন মানসিকতা দেখা যায়।  এসব সিদ্ধান্তে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ঝুঁকির দিকটিতে মনোযোগ না দিয়ে অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় তা অনেক সময় ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
দুর্যোগের ঝুঁকি নিয়ে এমন আচরণের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে- এমনটাই মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের উপ–মহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে ইউএনডিআরআরের প্রধান মামি মিজুতোরি সতর্ক করে বলেন, ‘দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া বিষয়ে আমাদের প্রকৃত সত্য সবার সামনে বলতে হবে।  এটা শুধু প্রয়োজন নয়, অত্যন্ত জরুরি’।  তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি বেশ স্পষ্ট যে, দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার আগেই আমাদের তা ঠেকাতে হবে।  দুর্যোগের ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না।  আগাম প্রতিরোধ কৌশলে ঝুঁকি কমাতে খরচও বেশ কম হবে’।
ইউএনডিআরআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দশকে বিশ্বজুড়ে দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ক্ষতি প্রশমনে বছরে প্রায় ১৭ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে।  কিন্তু সমস্যা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জেরে সংঘটিত দুর্যোগের বেশিরভাগ আঘাত হেনেছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোয়।  এসব দেশ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশেরও কম দুর্যোগ প্রশমনে ব্যয় করে।  এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ক্ষতির জেরে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে পারে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। সূত্র: ইউএনডিআরআর

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ