ফের জীবাশ্ম জ্বালানিতে ঝুঁকছে বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চলতি বছরে জ্বালানি সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।  ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যে একই ধরনের তেল সংকট দেখা দেয়।  যদিও এমন দুর্যোগে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি আসে।  তবে দুর্ভোগ থাকবেই।  কারণ এসময় জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায়, কমে যায় অধিকাংশ দেশের প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দেখা যায় বিশৃঙ্খলা।  এমন সংকট সামাল দিতে সরকারগুলো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে।  পুনরায় ঝুঁকতে পারে জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে, যা জলবায়ুর স্থিতিশীলতা কঠিন করে তুলতে পারে।  এক্ষেত্রে ক্ষতি এড়াতে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে, এমন জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে যা জলবায়ু নিরাপত্তায় ভূমিকা পালন করতে পারে।
ইউরোপে পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে।  অঞ্চলটিতে গ্রীষ্মের শুরুতেই তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে।  স্পেনে এরই মধ্যে গ্যাসের চাহিদা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।  অন্যদিকে রাশিয়া ১৪ জুনের পর থেকে পশ্চিম ইউরোপে গ্যাসের প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে।  এতে অঞ্চলটিতে গ্রাসের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে।  তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এক গ্যালন গ্যাসের দাম বেড়ে রেকর্ড পাঁচ ডলারে দাঁড়িয়েছে।  দেশটিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।  অস্ট্রেলিয়ার জ্বালানিখাতেও চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।  ফলে যে দিকে তাকানো যাচ্ছে সেদিকে সংকট দেখা যাচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে জ্বালানি সংকটে দেশে দেশে রাজনৈতিক বিপর্যয় তৈরি হতে পারে।  সম্ভবত ধনী বিশ্বের আট শতাংশ মূল্যস্ফীতির এক তৃতীয়াংশ জ্বালানি ও বিদ্যুতের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে হয়েছে।  পরিবারগুলো জ্বালানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।  তাই ঝুঁকি সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন সবুজ বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন।  তিনি এখন পেট্রলের ওপর শুল্ক স্থগিত করার পরিকল্পনা করছেন।  তেলের উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন সৌদি আরবে।  ইউরোপেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।  জার্মানিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু করা হচ্ছে।  চীন ও ভারতে কয়লার উৎপাদন বাড়ছে।
এই বিশৃঙ্খলা বোধগম্য কিন্তু সম্ভাব্য বিপর্যয়কর। কারণ এটি ক্লিন-এনার্জি ট্রানজিশনকে আটকাতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য পাবলিক হ্যান্ডআউট ও ট্যাক্স-ব্রেক প্রত্যাহার করা কঠিন হবে। খারাপ মানের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ৩০ থেকে ৪০ বছরের পুরোনো তেল-গ্যাসক্ষেত্রগুলোর বন্ধ করা কঠিন হবে। সেজন্য সরকারগুলোকে মৌলিক সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে।
পরিষ্কার জ্বালানির পাশাপাশি সরকারগুলোকে গ্রিডের সক্ষমতা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থায় উন্নতি করতে হবে।নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। পাওয়ার গ্রিড ও বাজারের নকশা সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নতুন নতুন প্রযুক্তিতে ২১ শতাকের চিন্তা ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। শূন্য কার্বন গ্রিডের ব্যাবহারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো যায়। পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে জ্বালানির উৎপাদন পরিবেশের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে পরিবেশ দূষণ। এতে পাল্টে যাচ্ছে জলবায়ু, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বেড়ে চলেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্ভাবন ও ব্যবহার এখন সময়ের দাবি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ