বাংলাদেশের কুচকাওয়াজে বন্ধু রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বর্ণিল করেছে সুবর্ণজয়ন্তীকে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। বাঙালির এ উদ্‌যাপনে এবার সঙ্গী হয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোবিন্দ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্যারেড ময়দানে। এবারই প্রথম বন্ধু দেশ ভারত, ভুটান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও মেক্সিকোর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে। জাতিসংঘ দলের একটি কন্টিনজেন্টও এতে অংশ নেয়। সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রেসিডেন্ট প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা তাকে স্বাগত জানান। প্রেসিডেন্ট পৌঁছানোর কিছু পরে প্যারেড স্কয়ারে আসেন ভারতের প্রেসিডেন্ট কোবিন্দ। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের আয়োজনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সুসজ্জিতভাবে এই কুচকাওয়াজে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনের প্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী রাশিদা খানমও কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে অভিবাদন মঞ্চের সামনেই রাখা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল একটি প্রতিকৃতি। দুই পাশে ছিল প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দুই পাশে জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবিও ছিল। একপাশে কালো জমিনে সোনালী হরফে ১৯৭১ এবং অন্যপাশে ২০২১ লিখে বোঝানো হয়েছে ৫০ বছরের ব্যাপ্তি। কুচকাওয়াজের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর একটি বিশাল প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা হয়। পরে সাত বীরশ্রেষ্ঠর আবক্ষ মূর্তি স্যালুটিং ডায়াসের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নীল রঙের স্যুট ও সাদা শার্ট পরে প্রেসিডেন্ট খোলা জিপে চড়ে কুচাকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং পরে অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন। নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক ছিলেন এবারের কুচকাওয়াজের অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা অভিবাদন মঞ্চে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আমন্ত্রিত অতিথিরা দুই ঘণ্টাব্যাপী মনোজ্ঞ এ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্যারেড ময়দান থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সমপ্রচার করে। কুচকাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির তথ্য জানানো হয় অতিথিদের। আর্মি, নেভাল এভিয়েশন ও র‌্যাব’র আকাশযান ফ্লাই পাস্ট করে প্রেসিডেন্টকে সালাম জানায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নতুন সংযোজিত বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম প্রদর্শিত হয়। পদাতিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের পর অত্যাধুনিক রণসাজে সজ্জিত দল প্রেসিডেন্টকে অভিবাদন জানায়। এছাড়া ওয়ার ডগ ও সম্মিলিত অশ্বারোহী কন্টিনজেন্ট প্রেসিডেন্টকে জানায় সালাম। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সুসজ্জিত গাড়িবহর কুচকাওয়াজে উন্নয়নের প্রদর্শন করেন। এছাড়া বিমানবাহিনীর কে-৮ ডব্লিউ, ও মিগ-২৯বি যুদ্ধ বিমানের অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে দর্শকদের মুগ্ধ করে। প্রদর্শিত হয় যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ম্যানুভার। বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণে প্রেসিডেন্টকে ‘ফ্লাইং স্যালুট’ দেয় যুদ্ধ বিমান মিগ-২৯। যুদ্ধ বিমানগুলো বর্ণিল ধোঁয়া উড়িয়ে অভিবাদন জানায়। সব শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে কয়েকশ’ সদস্যের সম্মিলিত বাদক দল প্রেসিডেন্টকে সালাম জানায়। আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জাতীয় পতাকা, প্রেসিডেন্টের পতাকা ও বিভিন্ন বাহিনীর পতাকাসহ প্যারাশুট জাম্প। ছত্রী সেনা দলে এবার ভারতের একজন নারী কর্মকর্তাও ছিলেন। কুচকাওয়াজ শেষে বর্ণিল ‘ডে ফায়ারওয়ার্কস’ প্রদর্শিত হয়। রঙিন ধোঁয়া আর বর্ণিল কাগজ উড়িয়ে বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকীর এই আয়োজনে আনা হয় ভিন্নতা। প্রতিবছর কুচকাওয়াজ শেষে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের অধিনায়কদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময় করেন। তবে, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এবার তা হয়নি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ