রাঙামাটি শত্রুমুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও দেশের কোনো কোনো জায়গা তখনো হানাদারমুক্ত হয়নি। রাঙামাটিতে মুক্ত হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ করে। এরপর দিন ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের হটিয়ে রাঙামাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
১৯৭১ সালের মে মাসে পাক বাহিনীর সৈন্যরা রাঙামাটি, রামগড় ও বান্দরবান দখল করে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের আওতায় সর্বপ্রথম ৫ মে ২৫ জন সদস্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এ দলকে কোম্পানি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে কোম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর নেতা সুনীল কান্তি দে বলেন, রাঙামাটি হানাদারমুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণের পরে ১৭ ডিসেম্বর কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান এবং রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শামসুদ্দীন আহমেদ পেয়ারা রাঙামাটির কুতুকছড়ি থেকে শহরে এসেছিলেন। তারা তৎকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এর সদস্য ছিলেন। তারা পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছিলেন। ওইখানে তারা দুজনে প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি কক্ষে ছোট একটি অনুষ্ঠান করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ সময়ে ১৪ ডিসেম্বর রাঙামাটির বরকলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ২টি যুদ্ধ বিমানযেগে পাকবাহিনীর সামরিক অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। ১৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলে। যৌথ বাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে পাক সেনারা পিছু হটে। মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা অগ্রসর হয়ে রাঙামাটি দখল করে নেয়।
রাঙামাটি মুক্তিযোদ্ধা জেলা সংসদ এর ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার মো. আব্দুল শুক্কুর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের এক নম্বর সেক্টরে আমরা যুদ্ধ করেছি। আমরা প্রথমে বাঘাইছড়ি, দূরছড়ি ও লংগদুর মাইনি দখল নেওয়ার পর মাইনীতে দুইদিন অবস্থান করেছিলাম। এরপরে ১৭ ডিসেম্বর কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা রাঙামাটি চলে আসি। এরপরে রাঙামাটি পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় মনীষ দেওয়ান এর নেতৃত্বে প্রথম স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলন করি। রাঙামাটি হানাদারমুক্ত হয়।
প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) মনিষ দেওয়ান বলেন, রাঙামাটির কুতুকছড়িতে ১৫ ডিসেম্বর সকালে আমাদেরকে হেলিকপ্টারে অবতরণ করানো হয়। ওইদিন সকাল থেকে সারা রাত পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ চলতে থাকে। ১৬ তারিখ সকালে আমি এবং শামসুদ্দীন কাউখালীর ঘাগড়ার দিকে নতুন একটি রাস্তার সন্ধানের এগুতে থাকি। তিনি আরও বলেন, ১৭ ডিসেম্বর কাউখালীতে এসে জানতে পারি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী দলবল নিয়ে রাঙামাটি ত্যাগ করেছেন। ১৭ ডিসেম্বর সকালে আমরা রাঙামাটি ডিসি অফিসে অবস্থান নেই। ওইদিন জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্পেশাল সিকিউরিটি ফের্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল সুজান সিং উভান এবং শেখ ফজলুল হক মনি ও শেখ ফজলুল হক সেলিমসহ তারা ১৮ ডিসেম্বর রাঙামাটি আসেন এবং বিকাল ৩ টার দিকে হেলিকপ্টারে করে অবতরণ করেন। আবারও স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং কিছু আনুষ্ঠানিকতাও করা হয়।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর