গৌরবদীপ্ত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর (পর্ব- ৫)

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ আগের দিনই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রস্তাব পাস করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকের পর বৈঠক করে। ৫ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি এবং ভারত ও পাকিস্তানের সেনা অপসারণসংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোতে। মার্কিন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১১টি দেশ। তবে ভোটে অংশ নেয়নি চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি ইয়াকুব মালিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। এত দিন পাকিস্তান বাংলাদেশে সামরিক ব্যবস্থার নামে গণহত্যা চালালেও যুক্তরাষ্ট্র টুঁ-শব্দটুকুও করেনি। যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাংলাদেশে নিপীড়ন, গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
অথচ আজকের অবস্থা তৈরি হয়েছে কেবল পাকিস্তানের অপরিণামদর্শী আচরণ ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে’। ওই সময় চীন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘে আলোচনা হতে পারে না। পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের নিজস্ব ব্যাপার। তখন ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন যে প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা তা সমর্থন করছি।
আমরা চাই, বাংলাদেশ প্রশ্নে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রাধান্য পাবে’। (সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, ত্রয়োদশ খণ্ড) একাত্তরের ৩ ডিসেম্বরের পর থেকেই ভারতীয় মিত্রবাহিনী স্থলপথে এগিয়ে আসে। ৫ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী বিভিন্ন সেক্টরের প্রধান সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নাটোর, রংপুর, যশোর ও রাজশাহীর সড়কপথের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
যশোরের নোয়াপাড়া থেকে মুক্তিবাহিনীর একটি দল খাইরাই স্কুলে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালালে তারা পালিয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী। কিছু হানাদার সেনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রাম দখল করে নেন।
মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের তথ্যমতে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর মুক্ত হয় এ দিন। মুক্তিবাহিনী সিলেটের করিমগঞ্জ দখল করে মুনশীনগরের দিকে এগিয়ে সেটিও দখল করে। উত্তর সেক্টরের বকশীগঞ্জ (জামালপুর) মুক্ত হয় এ দিন। মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি কলাম ময়মনসিংহ ও জামালপুরের শত্রু ঘাঁটিগুলো বিচ্ছিন্ন করার এবং টাঙ্গাইলের যোগাযোগ কেন্দ্র মুক্ত করার লক্ষ্যে দ্রুত এগোচ্ছিল। (সূত্র: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে)

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ