সীতাকুণ্ডের এক অভিশপ্ত কূপ ‘বারবকুণ্ড’

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির একটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা। এ উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন হলো বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন। এ ‘বাড়বকুণ্ড’ নামকরণের পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণও। এখানে হাজার বছর ধরে রহস্যজনকভাবে পানির মধ্যেই দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
সীতাকুণ্ড সদর থেকে তিন মাইল দক্ষিণে এবং সেখান থেকে এক মাইল পূর্বে পাহাড়ের ওপর রয়েছে একটি দ্বিতল মন্দির। মন্দিরের নিম্নতলে রয়েছে একটি কূপ বা কুণ্ড। যা বাড়বকুণ্ড নামে পরিচিত। মন্দির ও কুণ্ডটিতে পূজা-স্নান করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সেই থেকেই এলাকাটি বাড়বকুণ্ড নামে পরিচিতি লাভ করে।
তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এ একটি কূপেরই দু’পাশের পানি দু’রকম। একপাশের পানি বেশ ঠান্ডা, অন্যপাশের পানিতে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আর সেই পানি ঘিরেই যত চাঞ্চল্য। গরমের কারণে সেই পানির কাছে দাঁড়ানো মুশকিল হলেও হাতে নিলেই যেন উধাও হয়ে যায় পানির তাপ। বিষয়টি যেমন অবাক করার মতো, আবার মজাও পান অনেকে।
কয়েকশ’ বছরের পুরনো কালভৈরবী মন্দিরের পাশেই এ অগ্নিকুণ্ডের অবস্থান। অনেকের মতে, অগ্নিকুণ্ডটি হাজার বছরের পুরনো। কিন্তু এটির মধ্যে আগুন জ্বলার রহস্য খুঁজতে গিয়ে মিলেছে নানা রকমের উত্তর। কারো কারো মতে এটি অভিশপ্ত একটি কূপ। আবার কারো মতে এটি প্রাকৃতিক কারণ।
প্রচলিত রয়েছে, প্রাচীনকালে দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে নর বলি দেওয়া হতো এ জায়গায়। এভাবে চলতে চলতে একদিন আগুন ধরে যায়। অনেক চেষ্টার পরও নেভানো যায়নি সেই আগুন। যা যুগ যুগ পেরিয়ে এখনো জ্বলছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে এটি ধর্মীয় আশীর্বাদ।
জায়গাটিতে রয়েছে শত শত বছরের পুরনো বেশ কিছু মন্দির। বিশেষ করে অগ্নিকুণ্ডটির পাশেই রয়েছে দুটি শিবমূর্তি কালভৈরবী মন্দির। যেগুলোর দেখাশোনায় রয়েছেন একজন পুরোহিত।
পুরোহিতের মতে, শিব ও পার্বতী ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। পার্বতীর বাবা একদিন শিবকে অপমান করলে তা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন পার্বতী। সেই খবর পেয়ে রাগে পার্বতীকে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন শিব। এ কারণে তখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল পৃথিবী। আর শিবকে শান্ত করতে ও পৃথিবীর ধ্বংস ঠেকাতে তার চক্র দিয়ে পার্বতীর শরীরকে ৫১ ভাগ করেন বিষ্ণু। যার একটি ভাগ পড়েছে বাড়বকুণ্ডের এ জায়গায়।
তবে বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। বিজ্ঞানের মতে, ব্রিটিশ আমলে এ পাহাড়ে মিলেছিল মিথেন গ্যাসের সন্ধান। কোনো এক কারণে সে সময় সীসা দিয়ে গ্যাস কূপের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই পানিতে জ্বলে আগুন।
কথা হয় বাড়বকুণ্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কূপটি হাজার বছরের পুরনো। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এটি দেখতে ছুটে আসেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বেশি। এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে পূজা ও কূপে স্নান করেন। তাদের মতে, এখানে স্নান করলে গঙ্গা স্নানের ফল হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছে হওয়ায় এ অঞ্চলে মানুষের যাতায়াতও বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এসটিইউ