চা-পাতায় গাছের যত্ন 

জেনে নিন ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চা ও গাছের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা নিবিড়। একইভাবে চা-পাতা ও গাছের সম্পর্কটাও বেশ ‘আন্তরিক’ বলতে পারেন।  যাঁরা গাছ ভালোবাসেন, বাগান করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বিষয়টি জানেন।  গাছের যত্নে অনেকেই ব্যবহৃত চা-পাতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।  বলা হয়, চা-পাতা বেশ ভালো জৈব সার।  চা-পাতা কি আদতেই ভালো জৈব সার, নাকি এর কোনো খারাপ দিকও আছে?  চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
ঘরে, বারান্দায়, ছাদে কিংবা বাগানে যাঁরা বৃক্ষচর্চা করেন, তাঁরা সাধারণত রাসায়নিক সার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।  এ ক্ষেত্রে চা-পাতা পছন্দের তালিকায় থাকে ওপরের দিকে।  চা যেহেতু প্রতিদিনকার পানীয়, তাই ব্যবহৃত চা-পাতা পাওয়া যায় হাতের কাছেই।  কেউ চা-পাতা গাছের গোড়ায় সরাসরি ঢেলে দেন, কেউ আবার কয়েক দিন রেখে জৈব সার বানিয়ে কাজে লাগান।
মানবদেহের জন্য চায়ের উপকারিতা কতটুকু, তা আমরা কমবেশি জানি।  গাছের বেলায়ও চা-পাতার উপকারিতা অনেক।  চা-পাতায় আছে ট্যানিক অ্যাসিড।  চা-পাতা পচতে শুরু করলে মাটিতে এই ট্যানিক অ্যাসিড ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ছাড়ে।  ফলে মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি পুষ্টি গুণাগুণও।  চা-পাতা বেশ ভালো ‘মালচ’ হিসেবে কাজ করে।  ‘মালচিং’ মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।  এই পদ্ধতির চর্চা আমাদের দেশেও অনেক দিন ধরে চলছে।  মালচিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের উপাদান- ধান বা গমের খড়, কচুরিপানা, গাছের পাতা, শুকনা ঘাস, কম্পোস্ট, ভালোভাবে পচানো রান্নাঘরের আবর্জনা ইত্যাদি।  এই উপাদানগুলো দিয়ে গাছপালার গোড়া, সবজিখেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়া হয়।  আর একেই বলে মালচ এবং পদ্ধতিটিকে বলা হয় মালচিং।
তো মালচিংয়ের ব্যবহৃত উপাদানের মধ্যে চা-পাতা অন্যতম উপাদান।  চা-পাতা মাটির তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং মাটিকে দ্রুত শুকিয়ে যেতে দেয় না।  এ ছাড়া আগাছা জন্মাতেও দেয় বাধা। মালচিংয়ের জন্য গাছের গোড়ায় মোটামুটি শুকনা চা-পাতার এক আস্তরণ দিতে হয়, যাতে মাটির উপরিভাগ পুরোপুরি ঢেকে যায়।  কীটপতঙ্গ গাছের জাতশত্রু।  চা-পাতা মেশানো পানি গাছে ছিটিয়ে দিলে কীটপতঙ্গের হাত থেকে রেহাই মেলে।  চায়ের ঘ্রাণ ইঁদুর, বিড়াল ও অন্যান্য পোকামাকড়ের ভীষণ অপছন্দ।  তাই গাছের পাতায় ও গোড়ায় চা-পাতা ছিটিয়ে দিলে এসব থেকেও থাকা যায় নিরাপদ।  এ ছাড়া চায়ের পাতার কারণে গাছে ছত্রাকও জন্মে না।
অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি চা-পাতা জোগান দেয় নাইট্রোজেনের।  এই নাইট্রোজেন গাছের বৃদ্ধির জন্য অতি প্রয়োজনীয়।  নাইট্রোজেনের অভাব হলে গাছের পাতায় ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটে।  ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং খাবারও তৈরি করতে পারে না।  ধীরে ধীরে গাছ মরেও যেতে পারে।
সব গাছের জন্যই কি উপকারী?
এত গুণাগুণের পর চা-পাতার উপকারিতা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়।  তবে চা-পাতা সব কাছের জন্য উপকারী নয়।  যেসব গাছ অম্ল পরিবেশ সহ্য করতে পারে না, সেগুলোর জন্য চা-পাতা ক্ষতির কারণ হতে পারে।  এ কারণে রোপণের সময় খেয়াল রাখতে হবে, গাছগুলো মাটির অম্লতা সহ্য করতে পারে কি না।  আর তা যাচাই করেই চা-পাতা ব্যবহার করা উচিত।  তবে প্রাথমিকভাবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।  গাছের পাতা হলুদ রং ধারণ করলে বুঝে নেবেন মাটিতে অম্লের পরিমাণ বেশি।
চা-পাতা ব্যবহারে সতর্কতা
চা-পাতা গাছের জন্য ভালো বলে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা উচিত হবে না।  আমরা কেউ কেউ দুধ চা পছন্দ করি, আবার কেউ লাল চা।  কেউ চায়ে চিনি মেশাই, আবার কেউ চিনি নিই না।  তাই ব্যবহৃত চা-পাতা গাছের গোড়ায় দেওয়ার আগে বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে।  গাছের জন্য চিনি ও দুধ বেশ ক্ষতির কারণ হতে পারে।  তাই দুধ চা বানানোর পর যে চা-পাতা পাবেন, তা গাছের গোড়ায় দেওয়া যাবে না।
টি-ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  কারণ, টি-ব্যাগ যে উপাদান দিয়ে তৈরি, তা মাটিতে না-ও মিশতে পারে।  তাই টি-ব্যাগ কেটে শুধু পাতাগুলো গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে।
সব শেষে কথা হলো, চা-পাতা গাছের গোড়ায় দিলে উপকার মেলে।  তবে একটু সতর্ক থাকতে হবে।  লাল চা থেকে যে পাতা বের হচ্ছে, তা-ই শুধু ব্যবহার করতে হবে।  চা অর্ধেক কাপ খেয়ে বাকিটা খেতে ইচ্ছা হলো না, আর অমনি গাছের গোড়ায় ঢেলে দিলেন- এটা করাও বারণ।  গরম চা গাছের ক্ষতি করে।  তাই চা ঠান্ডা হলেই তা গোড়ায় ঢালুন।  চা-পাতা জৈব সারে পরিণত করেও দেওয়া যাবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ