তারাবি নামাজের দোয়া-মোনাজাত ও প্রস্তুতি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রমজানের তারাবি নামাজ শুরু হতে আর মাত্র ৩/৪ দিন বাকি। মুসলিম উম্মাহ যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে তারাবি নামাজ পড়বে।  দীর্ঘ একবছর পর পর রমজান এলেই রাতের এ নামাজ পড়তে হয়।  হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতের (তারাবি ) নামাজ ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে পড়বে, তার জীবনের আগের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ সুবহানাল্লাহ!
রমজানের শুরুতেই মুমিন মুসলমান তারাবি নামাজের নিয়ত, নিয়ম, দোয়া ও মোনাজাত শেখার বা প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়।  তাই তারাবি নামাজ পড়ার প্রস্তুতিতে এর নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত তুলে ধরা হলো-
তারাবি নামজের নিয়ম
তারাবি নামাজ দুই দুই রাকাতে আদায় করতে হয়। অনেকেই নামাজটির আরবি নিয়ত করে থাকেন।  রমজান এলেই তারাবি নামাজের নিয়ম, আরবি নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত খুঁজে থাকেন।
নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ للهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلَوةِ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।
নিয়ত আরবিতেই করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।  বাংলাতেও করা যাবে। তাহলো-
তারাবি -এর দুই রাকাত নামাজ কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য (জামাত হলে- এ ইমামের পেছনে) পড়ছি- (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।
তারাবি পড়ার নিয়ম
তারাবি নামাজ দুই দুই রাকাত করে পড়তে হয়। দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।  এভাবে ৪ রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেওয়া।  তাসবিহ-তাহলিল পড়া বা কিছু সময় বিরতি নেওয়া উত্তম। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা।  এরপর আবার দুই দুই রাকাত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবি আদায় করা।
তারাবি নামাজের দোয়া
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি।  সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’
৪ রাকাত তারাবি আদায় করে বিশ্রাম বা বিরতির পর ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে।  যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়।  আর তাহলো-
উল্লেখ্য তারাবি নামাজের ৪ রাকাত পর পর পড়ার এ দোয়াটি ব্যাপক প্রচলিত।  তবে এ দোয়ার সঙ্গে তারাবি নামাজ হওয়া কিংবা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এমন নয় যে, এ দোয়া না জানলে বা তারাবি নামাজে না পড়লে নামাজ হবে না।  বরং যে কোনো দোয়াই পড়া যাবে।  তবে এ সময়টিতে কুরআন-সুন্নাহর দোয়া, তাওবাহ-ইসতেগফারগুলো পড়াই উত্তম।
তারাবি নামাজের মোনাজাত
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার।  ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার।  বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু।  আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির।  বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন’।
অনেকেই ৪ রাকাত পর পর মোনাজাত করে থাকেন।  আবার অনেকে পুরো নামাজ শেষ করে মোনাজাত একসঙ্গে মোনাজাত দেন।  তবে নামাজ শেষ করে বিতর পড়ে মোনাজাত দেওয়াই উত্তম।  মোনাজাতের জন্যও দেশব্যাপী মানুষের কাছে একটি দোয়া প্রাচীনকাল থেকেই ব্যাপকভাবে পড়া হয়।  তারাবি নামাজের দোয়ার মতো এ মোনাজাতটিও নামাজ হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।  তবে মোনাজাতের শব্দগুলো অনেক চমৎকার ও প্রাঞ্জল।  অনেকে তারাবি নামাজের মোনাজাতের জন্য এ দোয়াটিকে আবশ্যক মনে করেন।  কেউ কেউ এমনও মনে করে যে, এ দোয়াটি ছাড়া তারাবি নামাজের মোনাজাত হবে না।  এ ধারণা/বিশ্বাস মোটেও ঠিক নয়।  তবে এ দোয়ায় মোনাজাত দিলে গুনাহ হবে তাও নয়।
তবে রমজান জুড়ে বিশ্বনবির এ ইসতেগফার দুইটি বেশি বেশি পড়া জরুরি।  আর তাহলো-
১. اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।
২. اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ (উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা’।)
মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহাঅনুগ্রহের মাস রমজান।  এ মাসের মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি।  এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো কিয়ামুর রমজান তথা তারাবি নামাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে তারাবি নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।  রাতের নামাজ (তারাবি) আদায়েল মাধ্যমে বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ