দেশে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও সুস্থ হওয়ার হার কম

ঢাকা ব্যুরো, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
লাফিয়ে লাফিয়ে খুব দ্রুততার সাথে দেশে কোভিড- ১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় সুস্থ হওয়ার হার অনেক কম। গত কয়েকদিনে প্রতি ২৪ ঘন্টায় ৩০০ এর অধিক আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১০-১২ জন করে। এই হার বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কতটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। আজ রবিবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৩১২ জন। এ নিয়ে দেশে কোভিড- ১৯ এ মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৪৫৬ জনে। অন্যদিকে একই সময়সীমায় মৃত্যু হয়েছে আরো ৭ জনের। এই নিয়ে মৃত্যুর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ জনে।
রবিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, তার সঙ্গে ছিলেন অধিদফতরের এমআইএস পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান খান। নিজের বাসা থেকে এতে সংযুক্ত হয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে তথ্য প্রদান করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

মন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৬৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩ হাজার ৮২৫ জনের। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৩১২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৫৬ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৭ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯১ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ৯ জন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৭৫ জন।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভেন্টিলেটর মেশিনে চিকিৎসা নিয়েছেন, এমন ৯ জন রোগীর মধ্যে আটজনই মারা গেছেন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে আদেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে ১০ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রয়েছে।
করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায়ের নির্দেশনা থাকলেও তা পালন হচ্ছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, লকডাউন সঠিকভাবে পালন হচ্ছে না। আক্রান্ত লোকজন নতুন নতুন এলাকায় যাচ্ছেন। ফলে ওইসব এলাকার লোকজনও আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বেড়ে যাচ্ছে।
বুলেটিন উপস্থাপনকালে করোনার বিস্তাররোধে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।
গত ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়ে উঠলেও এখন ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সাড়ে ২৩ লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। তবে ছয় লক্ষাধিক রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি নানা সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে; যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ইতোমধ্যে মোট ২ হাজার ৪৫৬ জন আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৭৫ জন। সেই হিসেবে মোট আক্রান্তের মধ্যথেকে সুস্থ হওয়ার হার খুবই কম। অন্যান্য দেশে এই হার অনেক বেশি। এছাড়াও আইসিইউতে থাকা রোগীদের অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করছেন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়। সব মিলিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় আক্রান্ত যারা তাদের সুস্থতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ বাড়িয়ে চিকিৎসকের নিরাপত্তার মাত্রাও বাড়াতে হবে বলে তাদের অভিমত। 

ডিসি/ এসআইকে/এমএসএ