সকল দুর্যোগে পাশে ‘স্পৃহা’

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি >>>
বৈশ্বিক মহামারির খ্যাতি নিয়ে পুরো বিশ্বকে থমকে দিয়েছে নভেল করোনা ভাইরাস। বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে মুচড়ে ফেলে ইতোমধ্যে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের দেহে বসবাসের সুযোগ করে নিয়েছে বর্তমান বিশ্বের অজানা আতঙ্ক করোনা ভাইরাস তথা কোভিড- ১৯। অপ্রতিরোধ এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে তাই বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চল কার্যত অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দেশে দেশে কোথাও লকডাউন, কোথাও কাউফিউ আবার কোথাও বণ্য পশু রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রকৃতির নির্মম এই প্রতিশোধ আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্বময়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কার্যত পুরো দেশ লকডাউনে। এমতাবস্থায় দেশের দিনমজুর, দরিদ্র ও দিন এনে দিন চালানো পরিবারগুলো রয়েছে নানাবিধ খাদ্যকষ্টে। অন্যদিকে নিম্নবিত্তদের বেহাল দশায় যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে দেশের মধ্যবিত্ত বলে পরিচিত পরিবারগুলোও। অবরুদ্ধ এসকল পরিবারের পাশে যেন ত্রাতার বেশে অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রামের সুপরিচিতি রক্তদাতা সংগঠন স্পৃহা ব্লাড ডোনেশন সোসাইটি। চট্টগ্রাম নগরের ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলীতে সংগঠনের জন্ম হলেও ইতোমধ্যে এটি পুরো নগরময় পরিচিতি লাভ করেছে তাদের ভিন্নধর্মী সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে। চলমান মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই তারা ইতোমধ্যে একাধিকবার রক্ত দিয়ে সহায়তা করেছে অনেককে। মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সাধারণ মানুষকে রাতে-দিনে সচেতন করার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে নিজেদের অর্থায়ন ও উদ্যোগে। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করাসহ করোনা থেকে মুক্ত থাকতে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে করেছে মাইকিং।
শুধু তাই নয়, সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ উদ্যোগে অভাবগ্রস্ত, দরিদ্র পরিবারগুলোর তালিকা করে রাতের ঘুমিয়ে থাকা আঁধারে সেসব পরিবারে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে সংসারের নিত্যপণ্য। সম্পূর্ণ নিজেদের টাকা এক সঙ্গে করে এসব খাদ্য সহায়তা দিয়ে তালিকাভুক্ত পরিবারগুলোকে খাদ্যের কষ্ট পাওয়া থেকে মুক্ত রাখা স্পৃহা ব্লাড ডোনেশন সোসাইটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দরিদ্র পরিবারগুলোর পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারকেও নিজেদের উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবিরা। গত ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নগরের দক্ষিণ কাট্টলীর সড়ক-উপসড়কগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে এবং করোনা থেকে মুক্ত রাখতে বিশেষ হাতধোয়া কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি যা এখনো অব্যাহত রেখেছে। ৩ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে একটি পরিবারের ৭ দিনের খাবার সামগ্রী বিতরণ করেছে যা এখনো অব্যাহত আছে। যখনই কোনো পরিবার খাদ্যাভাবে আছেন বলে জানতে পারছে তখনই খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সেই পরিবারের দরজায়। ইতোমধ্যে প্রতিবারের ন্যায় বিতরণ করেছেন ইফতার ও সেহেরি সামগ্রীও।
জানতে চাইলে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. জমির উদ্দিন দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, স্পৃহার সৃষ্টি হয়েছে রক্তদাতা সংগঠন হিসেবে। কিন্তু নানান পারিপার্শ্বিক কারণে আমরা রক্তদানের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন মানবিক কাজে যুক্ত হচ্ছি। কারণ যখন কোনো মানবতার প্রশ্ন চোখের সামনে ঘুরপাক খায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই একজন সংগঠক হিসেবে তা চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে চলা কঠিন। তাই সংগঠনের সবাই মিলে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে আমরা দেশের দুর্যোগকালীন যে কোনো মানবিক সহায়তা দিতে চেষ্টা করি।

ডিসি/এসআইকে/আইএস