নারায়ণগঞ্জকে পেছন ফেলতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম!

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম
বিশ্বব্যাপি তান্ডব চালানো নভেল করোনা ভাইরাস জেঁকে বসতে শুরু করেছে বাংলাদেশে।  দীর্ঘ দুইমাস এই জেঁকে বসার ধরণ সবাইকে স্বস্তিতে রাখলেও বর্তমানে সেই স্বস্তি হারিয়ে আতঙ্কের দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ।  করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগী অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।  গতকাল ১২ মে পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৬০ জনে।  আর মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫০ জন।  আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হওয়ার হার খুবই কম।  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে ১২ মে পর্যন্ত দেশে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৪৭।  যদিও আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হওয়ার এই পরিসংখ্যান নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে।
অন্যদিকে ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকা করোনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।  আর দ্বিতীয় ক্লাস্টার জোন হিসেবে নারায়ণগঞ্জ করোনা আক্রান্তের সেকেন্ড হোম হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে।  গতকাল ১২ মে পর্যন্ত শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৭ হাজার ৯২২ জনে। আর করোনার সেকেন্ড হোমখ্যাত নারায়ণগঞ্জে এই সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৫ জন।  এই জেলায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৫৭ জন।  সুস্থ হয়েছেন মোট ১৬০ জন।  এই জেলায় এখন প্রতিদিন গড়ে ৪৫-৫০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তা প্রতিদিনই কমছে।
নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের হার কমতে শুরু করলেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত।  বিশেষ করে চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্তের এই হার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।  গত ১১ মে জেলায় মোট ৬৫ জন আক্রান্ত হওয়ার খবরে পঁচন না ধরতেই গতকাল মঙ্গলবার (১২ মে) আঁতকে ওঠার মতো পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন।  গত ১১ মে ৬৫ জন আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে জেলায় মোট ৩৩২ জন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালেও ১২ মে নতুন করে আরো ৮৮ জন (একজন পুরাতন রোগীসহ) কোভিড- ১৯ পজেটিভ হয়।  এতে করে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় (পুরাতন একজন ছাড়া) ৪১৯ এ।  আর এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন মোট ২৩ জন।  অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে জেলা সিভিল সার্জনের প্রতিবেদন অনুসারে এ পর্যন্ত জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ৭০ জন।  এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, চট্টগ্রাম জেলায় করোনায় আক্রান্তের যে সংখ্যা তার ৭০% চট্টগ্রাম মহানগরের।  ফলে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম নগর আতঙ্কের নগরে পরিণত হয়েছে।  চট্টগ্রাম জেলায় যে ৪১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন তারমধ্যে ২৮২ জনই চট্টগ্রাম মহানগরের।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্তের বিষয়টি তুলে ধরে জেলায় করোনা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ দুই সচিবকে চিঠি দিয়েছেন।  অন্যদিকে গত ১১ মে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ৭১ জন চিকিৎসক যোগদান করেছেন।  এছাড়াও গত বেশ কিছুদিনের পরিসংখ্যানে জেলার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের আক্রান্তের হারও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
যে হারে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমনটি চলতে থাকলে অল্প কয়েকদিনেই চট্টগ্রাম করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড হোমখ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলার রেকর্ডকে ভাঙতে যাচ্ছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।   আর এমনটি ঘটলে বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে প্রায় কোটি মানুষের আবাস্থল চট্টগ্রাম জেলা। 
জেলায় হঠাৎ করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে মানুষের ডেমকেয়ার মনোভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।  তাদের মতে, মানুষ অহেতুক সামাজিক দুরত্ব মানছেন না।  স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সরকার তথা স্থানীয় প্রশাসন নমনীয়তা প্রদর্শন করায় জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে।  এছাড়াও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য বিধি-নিশেষ না মানার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।  চট্টগ্রামকে আক্রান্তের হাত থেকে মুক্ত রাখতে হলে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।  তিনি জানান, ইতোমধ্যে আমরা চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় বেশ কিছু বিশেষায়িত সেবা কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি।  আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের সংকটে পড়তে হবে না।  এছাড়াও নমুনা পরীক্ষার জন্য আমরা করোনা টেস্ট ল্যাবের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছি।  এতে করে আমরা আরো বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম হবো।  
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দ্রুততার সাথে কঠোর লকডাউন বা কারফিউ এর মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষকে ঘরবন্দী করা না গেলে চট্টগ্রামে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।  প্রশাসনকে নমনীয়তা পরিহার করে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করতে হবে।

ডিসি/এসআইকে/আইএস