স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, বাঁশখালীর বুড়ো-শিশু ঈদের কেনাকাটায়!

বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।  উপজেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ জন।  তারপরও সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি অধিকাংশ লোকজন আমলেই নিচ্ছে না।  স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই এখানে।  স্বাভাবিকভাবেই নিজের পরিবারের ছোট থেকে বুড়ো- সবাইকে নিয়ে দল বেঁধেই ঈদের মার্কেট করতে আসছেন বাঁশখালীবাসী।  করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সকল বিপনীবিতান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ঈদকে সামনে রেখে শর্তসাপেক্ষে সরকার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মার্কেট/শপিংমলগুলো খুলতে অনুমতি দেয়।  কিন্তু সরকারি নির্দেশনাকে সম্পূর্ণ বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের বিপনী বিতানগুলো পরিচালনা করছেন।  অন্যদিকে সবকিছু ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মার্কেটগুলোতে।  উপজেলার মার্কেটগুলোতে তাই মানুষের ঢল নেমেছে।  দোকানগুলোতে হাতেগোনা দু’একটি দোকানে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও বেশির ভাগ দোকানে স্বাস্থ্যবিধির কিছুই মানা হচ্ছে না।
রবিবার (১৭ মে) দুপুরে সরেজমিনে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কাপড়ের মার্কেটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই সাধারণ মানুষ কেনাকাটা করছেন।  ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না।  নিজের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে ও অন্যকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন তারা।  অন্যদিকে দোকান ব্যবসায়ীরাও সরকারের যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা মানার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা চালাতে দেখা যায়নি।  বিশেষ করে কাপড় ও কসমেটিক্স দোকানগুলোতে মানুষের জটলা দেখা গেছে চোখে পড়ার মত।  ছোট বড় কোনো দোকানেই নেই হাত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা।  আর থাকলেও বেশির ভাগ দোকানেই মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব।
পুকুরিয়া, চাঁনপুর ও চৌমুহনী, গুণাগরি, জলদী ও চাম্বল বাজারের মার্কেটগুলো খোলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় বইছে।  সচেতন মহলের দাবি, এখনি যদি এসব মার্কেট এবং দোকানগুলো বন্ধ করা না হয়, তাহলে এই উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।  তাই এখনি মার্কেটগুলো বন্ধ করা উচিৎ।  সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।  তাদের জোরদার মনিটরিং থাকলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
মার্কেটগুলোর ভেতরে মানুষের গাদাগাদি অবস্থার যেন ভীন্ন রূপ মার্কেট/বিপনী বিতানগুলোর সামনের সড়কসমূহ।  সড়কে শত শত অটোরিকশা নামায় বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কগুলোতে ও বিভিন্ন মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।  তার মধ্যে গুণাগরি, জলদী মিয়ারবাজার ও উপজেলা সদরে ভিড়ের কারণে অনেক সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।  এ অবস্থায় করোনার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁশখালী।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেতন করতে মাঠে থাকলেও কেউ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না।
ক্রেতারা বলছেন, ঝুঁকি জেনেও ঈদের কেনাকাটা করার জন্য বের হয়েছেন।  আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কেনাবেচা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।  কিন্তু ক্রেতারা তা মানতে চাইছে না।
অন্যদিকে জনসমাগম এড়াতে খোলা জায়গায় বাজার স্থানান্তর করা হলেও সেখানেও মানা হচ্ছে না সামাজিক, শারীরিক কোনো দূরত্বই।  ক্রেতারা গা ঘেঁষে কেনাকাটা করছেন।  অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার ছিলো না কোনোরকম স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী।  ফলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গুণাগরিতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মো. আনিছ দৈনিক চট্টগ্রামকে জানানম ঈদে কেনাকাটা করবে তা আনন্দের।  কিন্ত পরিবারের একজনের করোনা হলে সকল আনন্দ আর থাকবে না।  সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যদি কেনাকাটা করা যায় তবে ঠিক আছে।
জাফরিন সোলতানা নামক এক ক্রেতা জানান, করোনার ঝুঁকি থাকলেও কি করবো ঈদে সন্তানের নতুন পোশাক না দিতে পারলে ভালো লাগবে না তাই কেনাকাটা করতে আসা।  তবে পুরো বাঁশখালী উপজেলার কোনো দোকানেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।  গাদাগাদির মধ্যেই কেনা হচ্ছে পোশাক।  মানা হচ্ছে না কোনো বিধি-নিষেধ।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মোমেনা আক্তার দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে অনেক দোকানদারকে জরিমানাও করেছি।  তবে সামাজিক দূরত্ব মেনেই কিছু কিছু দোকান ঈদের বিকিনিনি করছে শুনেছি।  এখানে সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে নিজেদেরই সচেতন হতে হবে।  আপনি সচেতন না হলে জোর করেতো সচেতন করা সম্ভব নয়।  নিজেদের নিরাপত্তা নিজেকেই চিন্তা করতে হবে।  আমরা প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।  স্থানীয় জনপ্রিতিনিধি, পুলিশ, সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছেন।  যারা সামাজিক দূরত্ব না মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি