জৌলুসহীন ঈদ পালন চট্টগ্রামবাসীর

নগর প্রতিবেদক >>>
শত বছরের বেশি সময় পর একেবারে জৌলুশহীন ঈদ পালন করেছে চট্টগ্রামবাসী।  মুখে মাস্ক, গায়ে পুরনো জামা।  কাঁধে কাঁধ রেখে নয়, নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন তারা।  ছিল না চিরাচরিত সেই কোলাকুলির দৃশ্য, ছিল না আগবাড়িয়ে হাত মেলানোর তাড়াও।  সড়ক-মহাসড়ক, অলি-গলিতে ছিল না এ ঘর থেকে ও ঘরে ঈদের সালাম করতে যাওয়া শিশুদের কোলাহল।  ছিল না ঈদের পুরনো আনন্দ/স্মৃতিচারণমূলক কোনো আড্ডা।
প্রতিবছর চট্টগ্রাম নগরের জমিয়াতুল ফালাহ্ জামে মসজিদ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করতে অর্ধ লক্ষ মুসল্লির সমাগম হলেও এবার দশ হাজারও ছুঁতে পারেনি জনসমাগম।  দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর খুশির ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেছে নগরজুড়ে।  উপজেলাগুলোর গ্রামে গ্রামেও এই দৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও সামাজিক দুরত্বের বালাই ছিল না অনেক স্থানে।  মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে নানান স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক বিধি-নিষেধের খড়গ মাথায় নিয়ে সোমবার (২৫ মে) ভিন্ন আবহে চট্টগ্রামের মসজিদে মসজিদে আদায় করা হয় ঈদের নামাজ।  করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।  তবে নামাজ আদায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও মসজিদে প্রবেশ এবং বের হতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় বেগ পেতে হয় মুসল্লিদের।  একসঙ্গে সবাই বের হতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে পারেননি অনেকে।
সোমবার সকাল ৮ টায় জমিয়াতুল ফালাহ্ জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের খতিব ক্বারী সাইয়েদ মাওলানা আবু তালেব মো. আলাউদ্দীন।  ঈদের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ৯ টায়। এতে ইমামতি করেন মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. আহমেদুল হক।  নামাজ শেষে মুনাজাতে দেশ ও মুসলিম উম্মাহ’র সমৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর কাছে আকুতি জানান মুসল্লিরা।  এসময় অনেক মুসল্লিকে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা গেছে।  মুসল্লিদের মুখে ছিল না খুশীর হাসি।  ছিল না উচ্ছ্বসিত অট্টহাসি।  এ যেন এক মৃত্যুপুরীতে ঈদ পালনের বাধ্যবাধকতা।  যদিও মুসলিম জনগোষ্ঠীর সবচাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব এই ঈদ-উল ফিতর যা মুসলিম সমাজকে ছাড়িয়ে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ৮ টায়।  এতে ইমামতি করেন মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা আনোয়ার হোসেন।  সকাল পৌনে ৯ টায় এই মসজিদে ঈদের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।  এতে পেশ ইমাম মাওলানা নুর মো. সিদ্দিকী ইমামতি করেন।  এছাড়া নগর ও জেলার বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।  সরকারি নির্দেশনা মেনে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেন তারা।
ঈদের নামাজকে কেন্দ্র করে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদসহ চট্টগ্রামজুড়ে নেয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।

ডিসি/এসআইকে/আইএস