বৈষম্যের কারণে চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নিতে অনুৎসাহিত হচ্ছেন : ডা. শাহাদাত

চম্পক চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিবেদক >>>
সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে সরকার কর্তৃক বৈষম্য সৃষ্টির জন্যই করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে অনুৎসাহিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ডা. শাহাদাত হোসেন।  তিনি বলেনছেন, ‌‘আমরা এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।  আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম।  পরিসংখ্যানে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন নারায়ণগঞ্জকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।  কাজেই আমাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে’।  তিনি বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতা, তা হলো- আমরা ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি যে, সরকারি ডাক্তার ও বেসরকারি ডাক্তার এর মধ্যে সরকারি ডাক্তাররা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেসরকারি ডাক্তাররা পাচ্ছেন না বিধায় বেসরকারি ডাক্তাররা সে পরিমাণ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন না।  আমাদেরকে যদি করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে হয় তাহলে সকল ধরনের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল স্ট্যাফ, নার্স ও ডাক্তার সবাইকে আমাদের একই সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনতে হবে।  এ জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।  অন্যথায় আমরা প্রাইভেট সেক্টরে যে সুযোগ-সুবিধার কথা বলছি তা আমরা নাও পেতে পারি’।
গতকাল ২৮ মে (বৃহস্পতিবার) রাতে দৈনিক চট্টগ্রামে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কথাগুলো বলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও স্পোর্টস মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. শাহাদাত হোসেন।  এই লকডাউনের মাঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।  এ সেবা চলছে রবি, মঙ্গল, ও বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি এর মধ্যেই সরকার একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  আগামি ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সমস্ত গণপরিবহণ অর্থাৎ লকডাউন শিথিল করা হবে।  এতে করে বহু মানুষের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।  আমি চট্টগ্রাম এর প্রেক্ষাপট নিয়ে যদি বলি, যেখানে ২৮ মে ২২৯ জন সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছে।  চট্টগ্রামে এর মধ্যেই ২৪২৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।  এরমধ্যে চট্টগ্রাম নগরেরই ১৯২৬ জন।  আমরা দেখতে পাচ্ছি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের করোনা সেন্টার, জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল, বিআইটিআইডি হাসপাতালে সব মিলিয়ে বেড রয়েছে মাত্র ৩১০টি।  হাসপাতালে বেড এর অভাবে ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৭৬ জনের অধিক’।
ডা. শাহাদাত বলেন, আমি মনে করি আমাদের আইসোলেশন সেন্টার আরো বাড়ানো উচিত।  কারণ অনেকের বাসায় টয়লেট রয়েছে ১-২ টি এবং পরিবারের বসবাস করে ১০-১২ জন।  সেক্ষেত্রে পরিবারের কেউ যদি করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে সবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  এক্ষেত্রে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও খালি যেসব ভবন রয়েছে সেগুলোকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন ও সরকারি কর্মকর্তারা যদি আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করে, তাহলে আমি মনে করি একই পরিবারের অন্য সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হবে না।
নগর বিএনপির এই সভাপতি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা চট্টগ্রামে দেখতে পেয়েছি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পুলিশ সদস্যসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।  কাজেই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই করোনা যুদ্ধ মোকাবেলা করতে এগিয়ে আসতে হবে।  তবে লজিস্টিক সাপোর্ট ও অন্যান্য ইনফ্রাস্টাকচারের জন্য সরকারের সৎ উদ্দেশ্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন।  সরকারি উদ্যোগ না থাকলে অনেক জায়গায় যেখানে আইসোলেশন সেন্টার করা হবে সেখানে তারা অনুমতি নাও দিতে পারে।

ডিসি/এসআইকে/সিসি