করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দেহে কতক্ষণ সক্রিয় থাকে ভাইরাস?

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তিন ঘণ্টা পর ওই মৃতদেহে আর ভাইরাসটির কোনো কার্যকারিতা থাকে না।  ফলে মৃতদেহ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ক তথ্য নিয়ে আজ বুধবার (৩ জুন) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।  তিনি বলেন, ‘মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করতে তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগেই যায়।  তিন ঘণ্টা পরে আর মৃতদেহে এই ভাইরাসের কার্যকারিতা থাকে না’।
আর এ কারণেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ মারা গেলে তাকে স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে নিজ ধর্ম মেনে সৎকার কিংবা পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা যাবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার দাফন ও সৎকার নিয়ে নানা ধরণের আতঙ্ক ও ভয় প্রচলিত আছে।  আর এ কারণে, মারা যাওয়ার দীর্ঘ সময় পরও মৃতদেহ সরানো বা দাফন না হওয়া কিংবা দাফন করতে বাঁধা দেয়ার নানা ঘটনাও সামনে আসে।  এর আগে নারায়ণগঞ্জে এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ নিজের বাড়ির সিঁড়িতে পরে থাকলেও তা সরাতে পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনি।
ওই এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি বলেছিলেন, নিজে মুসলিম হলেও স্বজনেরা এগিয়ে না আসায় করোনা ভাইরাসে মৃত একাধিক হিন্দু মরদেহের মুখাগ্নি করতে হয়েছে তাকে।  এমন অবস্থার প্রেক্ষিতেই আজ এ মৃতদেহের দাফন ও সৎকার নিয়ে এ তথ্য এলো। 
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি মেনেই মৃতদেহ দাফন এবং সৎকার করা যায়।  তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মৃতদেহের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বডি ব্যাগ বা সেটা না পাওয়া গেলে পলিথিনে মুড়ে স্থানান্তর করা যায়।  মৃতদেহ দাফন বা শেষকৃত্যের জন্য নির্ধারিত কবরস্থান বা পারিবারিকভাবে নির্ধারিত স্থানে দাফন ও শেষকৃত্য করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, সংস্থাটি বলেছে যে, এখনো পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে সুস্থ কোনো ব্যক্তির মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়ায়।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মৃতদেহ দাফন ও সৎকারের যে নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে- মৃতদেহ দাফন বা সৎকার পরিবার ও জনসাধারণের জন্য খুবই সংবেদনশীল।  এ কাজে যাতে কোনো অব্যবস্থাপনা, মতপার্থক্য বা জটিলতার সৃষ্টি না হয় তার জন্যই এই নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে।  সেই সাথে সংক্রমণও যাতে ছড়িয়ে না পরে তা রোধ করাটাও এই নির্দেশিকা দেয়ার একটি উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে এবং অনুমোদনের ভিত্তিতেই দাফন ও সৎকারের এই নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে।  তিনি বলেন, যদিও মৃতদেহ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই; তারপরও যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, এর বিষয়ে খুব বেশি তথ্য জানা যাচ্ছে না এবং প্রতিনিয়তই ভাইরাসটি তার জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে চলেছে, তাই সাবধানতার অংশ হিসেবে দাফন ও সৎকারের সময় এই নির্দেশিকা মেনে চলতে বলা হচ্ছে।  এই ভাইরাস নিয়ে যা গবেষণা হয়েছে তা মাত্র ৫-৬ মাসের বিষয়।  আর তাই সাবধানতার জন্য এগুলো বলা হচ্ছে।
এই নির্দেশনায় মৃতদেহের ধর্মীয় আচার অনুসরণ ও পরিবারের সম্মতি নেয়ার বিষয়টির উপরও জোর দেয়া হয়েছে।  এছাড়া স্বাস্থ্য বিষয়ক উল্লেখযোগ্য যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-
এক. শুধু কোভিড-১৯ রোগী ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ স্পর্শ বা দাফন ও           সৎকার করতে হবে।
দুই. মৃতদেহ স্পর্শ নূন্যতম রাখতে হবে।
তিন. কোভিড-১৯ রোগীর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা যাবে না।
চার. মৃতদেহ দাফনের আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুরক্ষা পোশাক পরে এবং জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া মেনে           মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
পাঁচ. চার সদস্যের একটি দল যথার্থ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ প্রস্তুত ও বহন করবে।
ছয়. অনিয়ন্ত্রিতভাবে মৃতদেহ পরিষ্কার বা ধোয়া যাবে না।
সাত. মৃতদেহ প্লাস্টিকের কভার দিয়ে এমনভাবে মুড়িয়ে রাখতে হবে যেন তা কভারের বাইরের সংস্পর্শে না              আসে।
আট. দাফনের প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করতে হবে।
নয়. মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগটি কখনো খোলা যাবে না।
দশ. মৃতদেহ অপসারণের পর রোগীর ঘরটি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
এগার. এছাড়া মৃতদেহ পরিবহন, পরিবহনে ব্যবহৃত যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে হবে।- বিবিসি বাংলা

ডিসি/এসআইকে/আইএস