চমেক হাসপাতাল যেন মৃত্যুর দুয়ার

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এখন মৃত্যুর দুয়ারে পরিণত হয়েছে।  হাসপাতালটিতে অক্সিজেন সমস্যা এতোটাই প্রকট যে তা দেখে চিকিৎসকরা রীতিমতো ভয় পাচ্ছেন।  যে কোনো মুহুর্তে অনভিপ্রেত কিছু ঘটে যেতে পারে।  ইতোমধ্যেই এখানে অনাকাঙ্খিতভাবে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে। অনেক সুস্থ হওয়ার মতো তরুণ ব্যক্তিও রয়েছেন এই মৃত্যুর তালিকায়। একজন চিকিৎসকের ভাষায় ‘মরুভূমিতে আপনার এক বুক পিপাসা, আর আপনাকে বলা হচ্ছে আপনি থুথু গিলে পিপাসা নিবারণ করেন।  অন্য একজন চিকিৎসক বলছেন, ‘পুকুর থেকে মাছ তোলার পর মাছ যেরকম করে সেরকম অবস্থা হচ্ছে রোগীদের।  ধরা যাক ২৫ জন রোগীর জন্য নির্ধারিত একটা জায়গা।  এর মধ্যে ১৮/২০ টা বেডে অক্সিজেনের পোর্ট রয়েছে।  একটা পোর্ট একজন মাত্র রোগীর অক্সিজেন যোগান দিতে পারে।  সেখানে একশ জনেরও বেশি রোগী রয়েছে।  বেশিরভাগ রোগীরই অক্সিজেন দরকার।  তাও মিনিটে ১৫ লিটার করে।  এর মধ্যে যারা ১৮টি পোর্টের কাছাকাছি বেডে ফ্লোরিং করছেন তারা একটা পোর্ট থেকে চার-পাঁচজন করে অক্সিজেন নিচ্ছেন।  বাকি রোগীগুলো ছটফফট করছে।  যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।  ফ্লোরেও হাঁটার মতো জায়গা নেই।  রোগীরা রীতিমতো গড়াগড়ি খাচ্ছে।  এক বেড থেকে অন্য বেডে কোনো নেই কোনো দুরত্ব’।
সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করে একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘নরক যন্ত্রণা কেমন হয় আগাম তা দেখতে হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দেখে যান। হাসপাতালটিকে এখন অনেকে মৃত্যুর দুয়ার হিসেবেও আখ্যায়িত করছে।  তারা বলছেন, এখানে গুরুতর রোগীরা যারা একটু সেবা পেলে সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতেন, তারা এখানে এলে মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করতে বাধ্য হবেন।  এটি এখন মৃত্যুর দুয়ার, আসবেন, যাবেন মৃত্যু নিয়ে।
ওদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে এতোদিন এগিয়ে ছিল ঢাকা।  কিন্তু এই প্রথম ঢাকাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল চট্টগ্রাম।  শুধু ঢাকা নয়, মৃত্যুর হিসাবে চট্টগ্রাম বিভাগ গত মঙ্গলবার ছিল শীর্ষে।  মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া ৩৭ জন করোনা রোগীর ১৫ জনই চট্টগ্রাম বিভাগের।  অন্যদিকে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, সিলেট বিভাগে চারজনের, বরিশাল বিভাগে তিনজনের, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দুজন করে এবং ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন একজন।
সাধারণ মানুষেরা বলছেন, একটি সরকারি হাসপাতালই যদি করোনা রোগীদের সেবা নিদে না পারে, তাহলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কেন ঝুঁকি নেবে?  সরকার সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উৎসাহমূলক সুবিধার ঘোষণা দিয়েছেন যা বৈষম্যমূলক।  এই ঘোষণার পরপরই সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের বেসরকারিখাতে চিকিৎসাসেবা দেয়া সংশ্লিষ্টরা হাত গুঁটিয়ে নিয়েছেন যা মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখে এনেছে চট্টগ্রামকে। এই ঘোষণা যদি সরকারি-বেসরকারি সকলের জন্য হতো তাহলে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ইতিবাচকভাবে ভিন্ন হতে পারতো।

ডিসি/এসআইকে/আইএস