রাঙামাটিতে করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপনের দাবি চাকমা রাজার

রাঙামাটি প্রতিনিধি >>>
পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় আইসিইউ ও পিসিআর মেশিনসহ করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন চাকমা চার্কেল চিফ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।  তিনি বলেছেন, পাহাড়ে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে অন্ততঃ রাঙামাটি সদরে হলেও অবিলম্বে একটি করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন জরুরি।  এখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে তার প্রতিবেদন পেতে অনেক বিলম্ব ঘটছে।  এতে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হচ্ছে।  কারও উপসর্গ দেখা দিলে চট্টগ্রামে গিয়ে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করাও সম্ভব নয়।  ফলে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  তাই আক্রান্তদের চিকিৎসা ও রোগী শনাক্ত নিশ্চিত করতে রাঙামাটিতে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আইসিইউসহ করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।
পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেরা সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে না অভিযোগ করে রাজা দেবাশিষ বলেন, রাঙামাটিসহ অন্যান্য পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার কর্মহীন ও অসহায় মানুষ করোনাকালে সরকারি ত্রাণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  দূর্গম এলাকার অসংখ্য গ্রামের মানুষ আজ পর্যন্ত একেবারেই কোনো রকম সরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি।  তিনি বলেন, অনেক পাহাড়ি এলাকা আছে যেগুলো ভৌগলিক কারণে দূর্গম এবং সীমান্তবর্তী, সেসব এলাকার কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে আজ পর্যন্ত সরকারি ত্রাণের একটি দানাও পৌঁছেনি।  আর যারা পেয়েছেন, সেগুলো পরিমাণে কম।  ১০ কেজি চাউলের স্থলে পেয়েছেন ৪-৬ কেজি।  ত্রাণের বাকি চাউল আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুন) দুপুরে রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ির কার্যালয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন।  এসময় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানও।
রাজা দেবাশীষ বলেন, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সাজেকভ্যালি, বরকল উপজেলার ঠেগাভ্যালি, জুরাছড়ি উপজেলার ত্রিসীমান্তবর্তী এবং বিলাইছড়ি উপজেলার রাইখিয়ং ভ্যালির বহু পাহাড়ি গ্রামের মানুষ আজ পর্যন্ত কোনো রকম সরকারি ত্রাণ পায়নি।  ওইসব এলাকার মানুষ সবাই জুমচাষী ও শ্রমজীবী।  করোনার কারণে তারা তাদের জীবিকা হারিয়েছেন।  প্রায় আড়াই মাস ধরে তাদের কোনো আয়-উপার্জন নেই।  এসব দায়িত্ব তো সরকারকেই নিতে হবে।  সাজেকের সীমান্তবর্তী বেটলিং পাহাড়ে মোট ৩৬ পরিবার এক মুঠো ত্রাণও পায়নি।  সাজেকের বেশিরভাগ মানুষ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু।  অথচ এসব উদ্বাস্তু লোকজন টাস্কফোর্সে তালিকাভুক্ত থাকলেও একবিন্দু সহায়তা পায়নি।  আর এবার করোনাকালে অনেক এলাকার মানুষ যারা সরকারি ত্রাণের চাউল পেয়েছে মাত্র ৪-৬ কেজি।  অথচ সরকারি ত্রাণের চাউল ১০ কেজি হওয়ার কথা।  বাকি চাউল তাহলে নিশ্চয়ই কেউ আত্মসাৎ করছে।  এ ব্যাপারে আমি সতর্ক করে দিচ্ছি।  এরপরেও ব্যবস্থা নেয়া না হলে এফআইআর করা হবে।
তিনি বলেন, জুড়াছড়ির দূর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে নিয়ে ত্রাণ দিয়েছে শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে।  সেভাবে দূর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে হেলিকপ্টারে করে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান চাকমা রাজা।  তিনি দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই উল্লেখ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ওইসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার স্থাপনের দাবিও জানান।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, ত্রাণের তেমন কোনো ঘাটতি ছিল না।  দূর্গম এলাকায় বহু ত্রাণ দিয়েছি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে।  রাঙামাটি জেলায় ত্রাণ পায়নি এমন লোক খুব কম।  যদি কেউ ত্রাণ না পেয়ে থাকে, তাহলে তাদেরকে পরবর্তীতে দেয়া হবে।  আর যারা এমন অভিযোগ তুলছেন, চাইলে তারাও তো ত্রাণ দিতে পারেন।

ডিসি/এসআইকে/ইউএমএ