মাস্ক কেলেঙ্কারিতে আ’লীগ নেতা আমিনের বিরুদ্ধে মামলা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
সম্প্রতি মানহীন কেএন- ৯৫ সার্জিক্যাল মাস্ক নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।  এবার সেই নিম্নমানের মাস্ক আমদানির সাথে যুক্ত থাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।  মানহীন ৫০ হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানি করতে গিয়ে প্রতারণা ও ভুয়া কাগজ ব্যবহারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা হয় বলে জানা গেছে।  ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বাদি হয়ে এলান কর্পোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আমিনুল ইসলাম আমিনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।  রাজধানীর বনানী থানায় ৪৬৮, ৪৭১ ও ১৯৮ ধারার মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় গত ২৯ মে।  আমিনুল ইসলাম আমিন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে উচ্ছুক ছিলেন।  তিনি সাতকানিয়া উপজেলার বারদোনার অধিবাসী।
মামলার নথিপত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর উল্লেখ করেছে, এলান কর্পোরেশনের আমিনুল ইসলাম জাল ও বানোয়াট কাগজপত্রাদি দাখিলের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসজনিত (কোভিড-১৯) রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ব্যবহারের জন্য কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানি করে জনজীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল ৫০ হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের জন্য ঢাকার পুরানা পল্টনের এলান কর্পোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী আমিনুল ইসলামকে কার্যাদেশ দেয় ঢাকার মহাখালীর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।  গত ১৮ মে ঢাকা শুল্ক বিভাগ থেকে মাস্কগুলো খালাসের জন্য অনাপত্তিসূচক সনদও দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।  কিন্তু পরবর্তী সময়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানতে পারে, অনাপত্তি নেওয়ার জন্য এলান কর্পোরেশন যেসব কাগজপত্র দেখিয়েছিল, সেগুলো ভুয়া।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে অনুসন্ধান করে তাতে দেখা যায়, ফ্রি সেল সার্টিফিকেটটি মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিজেই ইস্যু করেছে।  অথচ এটা ইস্যু করার কথা ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটির।  অন্যদিকে আইএসও সার্টিফিকেট ইস্যুকারী জার্মান প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, এলান কর্পোরেশনের দেওয়া সার্টিফিকেটটি চীনের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা।  অথচ এলান কর্পোরেশনের দাখিল করা কাগজপত্রে লেখা ছিল চীনের জিয়ামেন টেকনোলজি নামের ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম।  এতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিশ্চিত হয়েছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এলান কর্পোরেশন কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানির মাস্কটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে সনদ জাল করেছে।  এরপরই গত ২৭ মে মাস্ক আমদানির জন্য দেওয়ার অনুমোদন ও অনাপত্তি সনদ বাতিল করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।  এর দু’দিন পর ঢাকার বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, মেসার্স এলান কর্পোরেশন, ৬০/এ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ স্বত্ত্বাধিকারী মো. আমিনুল ইসলাম, স্থায়ী ঠিকানা-গোলাম মহিউদ্দিন পাড়া, বারদোনা, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পেনাল কোড ৪৬৮, ৪৭১ ও ১৯৮ ধারায় মামলা রুজু করার জন্য অনুরোধ করা হলো।  জানা গেছে, মামলায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মোট আটজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।  এর মধ্যে দু’জন উপ-পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা, তিনজন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা, দু’জন অফিস সহকারী ও একজন উচ্চমান সহকারী।
তবে এই বিষয়ে আমিনুল ইসলাম আমিনের সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ডিসি/এসআইকে/আইএস