চসিকের আইসোলেশন সেন্টার উদ্বোধন করলেন তথ্যমন্ত্রী

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার আগে যেভাবে আমরা চলতাম সেভাবে আর নয়।  সেভাবে চললে আমাদের পক্ষে হাসপিটাল প্রস্তুত রেখে ও আরো আইেসোলেশন সেন্টার বানিয়েও করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।  মনে রাখতে হবে আমার সুরক্ষা আমার হাতে।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোও মাসের পর মাস বন্ধ রাখেনি, সেখানেও খুলে দেয়া হয়েছে।  সেখানে এখনও মানুষ মৃত্যুবরণ করছে করোনা ভাইরাসে।  এখনো প্রতিদিন শত শত হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এরপরও তারা লকডাউন শিথিল করেছে, কাজকর্ম শুরু করেছে।  তার মানে এই নয় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার আগে যেভাবে চলতাম সেভাবে এখনো চলবো।  আমরা কাজ করবো, নিজেকে স্বাস্থ্যগতভাবে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ি সুরক্ষিত রেখে, তাহলেই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মহামারিকে মোকাবেলা করতে পারবো।
আজ শনিবার (১৩ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেসরোডে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রমুখ।

বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক সমস্ত কিছু মনিটর করছেন, তার নির্দেশনাতেই সিটি কর্পোরেশনসহ আমরা সবাই কাজগুলো করছি।  আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, আমাদের দেশ উন্নত দেশ নয়, উন্নত দেশ না হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার উন্নত দেশ থেকে কম।  এই মহামারি সামাল দেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোও আগে থেকে প্রস্তুত ছিলনা।  যেকারণে সেখানে হাজার হাজার ও লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।  তিনি বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষের একটি উন্নয়নশীল দেশ।  এই দেশে অর্থনীতি উন্নত দেশের মতো অতো মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নয়।  এরপরও মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশে দুই মাসের বেশি সময় সবকিছু বন্ধ ছিল।  এখন সীমিত আকারে খোলা হয়েছে।  কারণ জীবন এবং জীবিকা দুটিই রক্ষা করতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৌণে এক কোটি মানুষের শহর চট্টগ্রাম।  প্রতিদিন আরো বিশ লাখ মানুষ এখানে যাতায়াত করেন।  ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।  শুরুতে চট্টগ্রাম শহরে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য অনেক সঙ্কট ছিল।  এখনো সঙ্কট কেটে গেছে তা নয়, সঙ্কট আছে।  কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা শুরু থেকে চেষ্টা করেছি বিভিন্ন হাসপাতালকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবং সরকারি ব্যবস্থাপনা গুলোকে আরো প্রসারিত ও উন্নত করার জন্য।
তিনি বলেন, শুরুতে এখানে কোনো ভেন্টিলেশন সুবিধাই ছিল না করোনা রোগীদের জন্য।  এরপরই জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ভেন্টিলেশনসহ এখন ১৫০ বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।  এরবাইরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৪টি ভেন্টিলেশন সিস্টেম দিয়ে শুরু করেছে, সহসাই তারা ভেন্টিলেশন ১০টিতে উন্নীত করবেন।  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৬টি ভেন্টিলেটর আছে সেখানে আরো বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।  ইতোমধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হয়েছে, সেখানেও সবগুলো ভেন্টিলেটর চালু করার চেষ্টা চলছে।  ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল চালু হয়েছে।  ইতোমধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়েছে।  তাদের ২০টি ভেন্টিলেটর আছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে যতটুকু জেনেছি সবরোগীকে ভেন্টিলেটর দিতে হয় না, আশি ভাগ করোনা রোগী ঘরেই চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়।  ১০ ভাগের মতো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে, তৎমধ্যে জটিলরোগীর সংখ্যা আরো কম।  কিন্তু রোগী যেভাবে বাড়ছে সেজন্য আমাদের আইসোলেশন সেন্টার দরকার।  অনেকের উপসর্গ খুব কম হলেও দুই রুমের বাসায় আইসোলেশনে থাকা সম্ভব নয়।  সেখানে যদি তাকে আইসোলেশনে রাখা হয় ঘরের অন্যদেরও অসুবিধা হয়।  সেই ক্ষেত্রেও আইসোলেশন সেন্টারের দরকার আছে।  আবার হালকা চিকিৎসারও দরকার আছে।  তিনি বলেন, এধরণের আইসোলেশন সেন্টারে যদি কেউ থাকে তাহলে পরিবারের যেমন সুবিধা হয়, পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয়।  সেজন্য সিটি কর্পোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে সেজন্য ধন্যবাদ জানাই।  সীকম গ্রুপ সিটি কনভেনশন সেন্টারটি দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক মানবতার কাজ করেছেন।

বক্তব্য রাখেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই মহামারি কখন যাবে আমরা জানিনা, অতীতে ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ভাইরাস যখন হয় সেটি তিনবছর ছিল।  এছাড়া প্ল্যাগসহ এই মহামারিগুলো একবছরে কিন্তু দূরীভূত হয়নি, ফিরে এসেছে।  এখন মানুষের চিকিৎসা জ্ঞান অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে।  এরপরও এই মহামারি অনেকেই বলেছিলেন, গরম শুরু হলে চলে যাবে, কিন্তু সেটি হয়নি।  চায়নাতে নির্মূল করার পর আবার ২য় পর্যায়ে দেখা গেছে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।  ইরানে কমে যাওয়ার পর আবার সেখানে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।  সুতরাং এই মহামারি কখন যাবে যেহেতু জানিনা, এই মহামারিকে কিভাবে আমরা মোকাবেলা করবো সেইভাবেই আমাদেরকে প্রস্তুতিটা রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আরো দুয়েকটি এধরণের আইসোলেশন সেন্টার করার জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।  যাতে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রোগী বাড়লে তাদের রাখা যায়।
সভাপতির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চার ধরনের করোনা পজেটিভ রোগী থাকে।  এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল রোগীদের আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর দরকার হয়।  বাকিরা অক্সিজেন পেলে সারভাইভ করতে পারে।  ৮০-৯০ ভাগই কম ও মৃদু উপসর্গের।  দেশ ভেদে তারতম্য হয়।  তিনি বলেন, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। পরিসংখ্যান বোঝার চেষ্টা করলে আতঙ্কিত হওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই।  নগরবাসীর কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করবো- আপনারা সচেতনতার পরিচয় দেবেন, সতর্কতা অবলম্বন করবেন।  সরকার আপনাদের পাশে আছে।  মেয়র বলেন, অহেতুক ঘোরাঘুরি করবেন না।  প্রয়োজনে বের হলে মাস্ক পড়তে হবে।  মুহুর্তের জন্যও নাক মুখ থেকে মাস্ক সরাবেন না।  যেকোনো সময় আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখলে নিরাপদ থাকবেন।  তাহলে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে আমরা করোনা জয় করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে সিটি হলের স্বত্বাধিকারী সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক লিখিতভাবে এ হলটি ব্যবহারের জন্য চসিককে সম্মতি দিয়েছেন।  এখানে ২১০টি শয্যা রাখা হয়েছে পুরুষদের জন্য।  ৪০টি শয্যা নারী রোগীর জন্য দোতলায় আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/আইএস