উত্তর কাট্টলীর লকডাউনের কার্যকারিতা ৬০ শতাংশ : আবুল খায়ের

সুমাইয়া সুমী, নগর প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
উত্তর কাট্টলীতে চলছে লকডাউন।  প্রশাসন থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে লকডাউনের ফলাফল ইতিবাচক করতে। সেই লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, পুলিশি টহল জোরদার, স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে আনসার সদস্যরাও।  আর নিয়মিতভাবে পুরো লকডাউন এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।  স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (কাউন্সিলর) ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে ওয়ার্ডবাসীকে ঘরে রেখে তাদের নিত্য সমস্যার সমাধানে রাত-দিন কাজ করছেন।  বাসিন্দাদের চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।  দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারগুলোকে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দিয়ে, নিজ উদ্যোগে রান্না খাবার বিতরণ করছেন।  তার পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ চলমান রয়েছে।  এতো কিছুর পরেও ওয়ার্ডের মানুষকে ঘরে রাখা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না।  অনেকের মতে, প্রতিদিন কাঁচা বাজার, মাছ, ফল-মূলের বিক্রেতাদের উন্মুক্ত করার মাধ্যমে লকডাউনকে অনেকটাই অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে।  এসব নিত্যপণ্য প্রতিদিন মানুষের প্রয়োজন হয় না।  সপ্তাহে দুইদিন যদি এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো তাহলে অহেতুক মানুষের ঘরের বাইরে আসা কিছু কমতো।  অজুহাতের মাত্রাও কমতো।

এ এইচ এম আবুল খায়ের।

উত্তর কাট্টলীতে চলমান লকডাউনের বিষয়ে কথা হয় সমাজ বিশ্লেষক, উত্তর কাট্টলীর অন্তর্ভুক্ত সিডিএ আবাসিক এলাকা সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি এ এইচ এম আবুল খায়েরের সাথে। তাঁর মতে, উত্তর কাট্টলীতে চলমান লকডাউনের কার্যকারিতা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়।  এর ফলাফল অন্তত ৬০ শতাংশ কার্যকর হবে।  তিনি মনে করেন, চলমান করোনা ভাইরাস মহামারি আচমকা বিশ্বব্যাপি সংকট ও দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে।  এটি কারোই প্রত্যাশিত ছিল না।  হঠাৎ এমন দুর্যোগ সারা বিশ্বকেই এলোমেলো করে দিয়েছে।  অর্থনৈতিক, প্রাত্যহিক জীবনাচার পরিবর্তনসহ নানান সংকটের সৃষ্টি করেছে।
আবুল খায়ের বলেন, এমন হঠাৎ সৃষ্ট মহাদুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন।  বিশ্বের অনেক দেশই এটি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।  একটি ছোট রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কাছে এটি আরও কঠিন।  নানানবিধ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।  দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও করোনা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকার যে ক’টি উদ্যোগ নিয়েছে তা দেশের অর্থনীতিকে যেমন সচল রাখতে সহায়তা করছে, তেমনি করোনা মোকাবেলাও ভূমিকা রাখছে।  আপনারা জানেন, সরকার ইতোমধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে কিছু নির্দিষ্ট এলাকাকে রেড, ইয়োলো ও গ্রীণ জোনে বিভক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।  রেডজোনগুলোতে সাধারণ ছুটির পাশাপাশি এক্সপেরিমেন্টাল ওয়েতে পর্যায়ক্রমে লকডাউন করছে।  লকডাউনকৃত এলাকার জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তাসহ নানান সেবা নিশ্চিতকরণে প্রশাসনকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে।  আমি মনে করি এই উদ্যোগ সরকারের পরীক্ষামূলক।  এটিতে সফলতা আসলে সরকার এক ধরণের সিদ্ধান্ত নেবে।  সফলতা না আসলে অন্য সিদ্ধান্ত।
রূপালী ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ এম আবুল খায়ের দৈনিক চট্টগ্রামকে আরো বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছি না বলেই আমাদের মাঝে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।  মানুষকেতো সরকার পিটিয়ে নিয়ম মানাতে পারবে না।  এটি আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যাভ্যাসের বিষয়।  দেখুন সরকার কিন্তু উদ্যোগ নিচ্ছে, কিন্তু আমরা সরকার নির্দেশমতে ঘরে না থেকে বেরুচ্ছি।  সামাজিক দুরত্ব মেনে কাজ করছি না।

এ এইচ এম আবুল খায়ের।

নিজের এলাকা উত্তর কাট্টলীতে লকডাউন প্রসঙ্গে এই সমাজ বিশ্লেষক বলেন, উত্তর কাট্টলীবাসী অন্যান্য যে কোনো এলাকা থেকে ব্যতিক্রম, সচেতন এবং অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী।  তাঁরা চাইলে আমাদের এই অঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব শেষ হবে।  তিনি বলেন, লকডাউন কার্যকরের পর আমাদের কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু রাত-দিন নিরলস কাজ করছেন।  আমাদের এমপি দিদারুল আলম এবং তাঁর চাচা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র পুরো চট্টগ্রামে অক্সিজেন নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা নিরসনে কার্যকর সেবা কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।  ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলীর মানুষ অনেক ভাগ্যবান যে, তাদের এলাকার অধিবাসীরা করোনাকালে চট্টগ্রামে সৃষ্ট সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখছে।  কোনো কিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যাচ্ছেন।  কাট্টলীবাসী যদি কষ্ট করে কিছুদিন ঘরে থাকেন, তাহলে কাট্টলীতে চলমান লকডাউন শতভাগ সফল হতো।  কিন্তু আমাদের কারণেই লকডাউনের কার্যকারিতা শতভাগ হচ্ছে না, তবে তা অন্তত ৬০ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে।
তিনি বলেন, উত্তর কাট্টলীতে লকডাউন যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না।  এখানে অর্থনৈতিক একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।  মূলত সে কারণেই লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না।  যেমন ধরুন- লকডাউন এলাকায় গার্মেন্টস বা শিল্পকারখানা খোলা রাখার কথা নয়।  কিন্তু তা খোলা রাখা হচ্ছে।  সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও সাধারণ শ্রমিকদের মালিকপক্ষ চাকুরি হারানোর একটা ভীতির সৃষ্টি করেছে।  ফলে মানুষ বাধ্য হয়েই ঘর থেকে বেরুচ্ছেন।  তিনি বলেন, লকডাউন এলাকার সবাইকেতো সরকার অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিতে পারবে না।  লকডাউন সবার জন্যই মাত্রাভেদে ক্ষতিকর।  কিন্তু সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এই উদ্যোগ নিতে হয়েছে।  সুতরাং, নিজেদের সুরক্ষার জন্যই আমাদের লকডাউন মেনে চলা জরুরি।

উত্তর কাট্টলীতে লকডাউনের ছবিটি গত শনিবার তোলা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন- সিডিএ আবাসিক এলাকাটি দিয়ে বিশ্বকলোনী ও ফিরোজশাহ’য় প্রবেশের বড় সড়কটি গেছে।  ফলে আমরা চাইলেও এখানে লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর করতে পারছি না।  প্রশাসন থেকেও এটা সম্ভব হচ্ছে না।  আমরা আমাদের সিডিএ আবাসিক এলাকার প্রতিটি উপসড়ক বন্ধ করে দিয়েছি।  আমাদের আবাসিকের ভেতরে অনেক দরিদ্র পরিবার বসবাস করে।  সিডিএ সমাজ কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের যা যা চাহিদা ও প্রয়োজন তা মেটাতে চেষ্টা করছি।  এছাড়াও সরকারের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রীর যে উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছেন তাও আমরা আমাদের কাউন্সিলরের মাধ্যমে পেয়ে তা সাধারণ মানুষদের মাঝে বিতরণ করছি।  কোনো সমস্যা হলে আমাদের নাম্বার দিয়ে রেখেছি, বলেছি কোনো সমস্যা বা কিছুর প্রয়োজন হলে আমাদের জানাতে।  আমাদের এলাকায় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য যা যা করণীয় তা আমরা করেছি এবং করছি।  এতো কিছুর পরেও আমাদের এলাকায় লকডাউন শতভাগ সফল করতে পারছি না।  কারণ আমাদের এলার্টনেস নেই।  বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমরা করতে পারছি না বলেই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।  তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও সিন্ডিকেট রাজনীতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চট্টগ্রামে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে।  কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চট্টগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।  একটি বিশেষ মহল সরকারের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন সিন্ডিকেটি কর্মকান্ড চালাচ্ছেন বলে মনে করেন আবুল খায়ের।
করোনা সংকটে সরকারের বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে বাজেট দেয়া হয়েছে তা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে সাময়িক এই করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে আমরা আমাদের উন্নয়ন ধারায় ফিরতে পারবো।  এক্ষেত্রে দেশের মানুষেরও দায়-দায়িত্ব আছে।  সামাজিকভাবে যে নিয়ম-নীতি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে তা মেনে চললে করোনা মোকাবেলা সম্ভব।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে যে চিকিৎসকদের দ্বারা সেবা নিতাম তাদেরকেও পাচ্ছি না।  আমাদের ভয়কে জয় করেই করোনার মোকাবেলা করতে হবে।  এ জন্য সমন্বয় বাড়াতে হবে।  রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে, বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে করোনা মোকাবেলায় প্রতিটি অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও চিকিৎসকদের কাজ করতে হবে।
এ এইচ এম আবুল খায়ের উত্তর কাট্টলীবাসীকে ঘরে থেকে চলমান লকডাউনকে কার্যকরের আহ্বান জানান।

ডিসি//এসআইকে/এসএস