উত্তর কাট্টলীতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে নেই, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমার দাবি

ছবিটি বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় তোলা।

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
অস্টম দিনের মতো উত্তর কাট্টলীতে চলছে লকডাউন। লকডাউনের ফলাফল ইতিবাচক করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, পুলিশি টহল জোরদার, স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে আনসার সদস্যরাও।  আর নিয়মিতভাবে পুরো লকডাউন এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।  স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (কাউন্সিলর) ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে ওয়ার্ডবাসীকে ঘরে রেখে তাদের নিত্য সমস্যার সমাধানে রাত-দিন কাজ করছেন।  বাসিন্দাদের চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।  দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারগুলোকে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দিয়ে, নিজ উদ্যোগে রান্না খাবার বিতরণ করছেন।  তার পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ চলমান রয়েছে।  এতো কিছুর পরেও ওয়ার্ডের মানুষকে ঘরে রাখা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। 

ছবিটি আজ বুধবার বেলা ১১ টায় প্রশান্তি আ/এ গেইট থেকে তোলা।

সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত জনসমাগম কিছুটা কম দেখা গেলেও এর আগে এবং বিকেল থেকে রাত অবধি ওয়ার্ডটির সর্বোত্রই যেন মানুষের হাট বসে।  নারী কিংবা পুরুষ, বৃদ্ধা থেকে শিশু; ওয়ার্ডের অলিতে-গলিতে সবার যেন মিলন মেলা বসে।  কোমলমতি শিশুদের নিয়ে সড়কে হাটা ছাড়াও তাদের নিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে যাওয়া-আসার দৃশ্যও চোখে পড়ছে অহরহ।  পরিস্থিতি এমন যেন- লকডাউন ঈদের ছুটিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দিনের বিভিন্ন সময় এবং বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত ওয়ার্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভাসমান কাঁচা তরি-তরকারি, মাছ ও ফল বিক্রির ভ্যানগুলো ঘিরে মানুষের জটলা।  এ দৃশ্য দেখা গেছে ঈশান মহাজন সড়কের ইনাগাজি বাড়ি থেকে কালিবাড়ি পর্যন্ত, ঈশান মহানজন সড়ক থেকে ছোট কালিবাড়ি, আমানত উল্লাহ শাহ পাড়া, বিশ্বাসপাড়া মাদ্রাসার মোড় থেকে কমিউনিটি সেন্টার মোড় গয়ে পশ্চিমে রেলগেইট, দক্ষিণে সাগরিকা স্টেডিয়াম, পূর্বে কর্ণেলহাট পর্যন্ত।  এছাড়াও ঈশান মহাজন সড়ক থেকে মোস্তফা-হাকিম কলেজ মুখী সড়কটিতেও একই অবস্থা দেখা গেছে।  অন্যদিকে যত্রতত্র সামাজিক দুরত্ববিহীন, কোনো ধরণের সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই স্বাভাবিক সময়ের মতোই আড্ডাবাজি দেখা গেছে কর্ণেল জোন্স সড়কের রেলগেইট পর্যন্ত, মাওলানা আমানত উল্লাহ শাহ পাড়ার খলিলুর রহমান মসজিদের মোড়, ক্লাব মোড়, আচার্য পাড়ার মূল সড়ক, একই এলাকার জলিল মিস্ত্রী বাড়ির সড়ক, বিশ্বাসপাড়া পুকুরের দুইপাড়ের ছায়াঘেরা দুই পুকুর ঘাট, মহব্বত আলী সড়ক, ঈশান মহাজন সড়ক, গার্লস স্কুল সংলগ্ন পুরো এলাকা, বড় ও ছোট কালিবাড়ি, পোস্ট অফিস গলি, নিউ মনছুরাবাদ, শাহেরপাড়া, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মোস্তফা-হাকিম কলেজ রোড, মজুমদার বাড়ি হয়ে ভিক্টোরী জুট মিল দিয়ে বের হওয়ার পুরো এলাকাজুড়েই দেখা গেছে মানুষের জটলা, আড্ডা।  এসব এলাকার উপ-গলিতে অবস্থিত মুদি ও চায়ের দোকানগুলো ছিল খোলা। আর সেসব দোকান ঘিরে ছিলো মানুষের সমাগম।  তবে পুলিশের কিংবা সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখলে নিমিষেই যেন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেকটা চোর-পুলিশের লুকোচুরি খেলার মতো। তবে প্রশান্তি আবাসিকের ভেতর থেকে বাইরে যাওয়া-আসা ছিল নিয়ন্ত্রণে। সেখানে পুলিশ-আনসার সদস্যরা কঠোরভাবেই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
এদিকে, গত আটদিনের লকডাউনে উত্তর কাট্টলীতে সংক্রমণের হার কমেছে বলে দাবি করেছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।  তাদের দাবি, গত ১ সপ্তাহে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে ৭ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে।  যা লকডাউনের আগের ১৪ দিনে ছিল ১৪৫।
কর্ণেল জোন্স সড়কের অবস্থা নতুন পাড়ার গলি থেকে দলবদ্ধভাবে দেখছিলেন নতুন পাড়া এলাকার বাসিন্দা বেবি আক্তার, আলেয়া বেগম, শারমিন আক্তার এবং রুবিজান। তারা দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, মানুষতো সবই বাইরে। আমরা দোকানে আসছিলাম। দেখতেছিলাম বাইরে মানুষ অনেক। কিসের লকডাউন? মাইনসেরে কষ্ট দেয়া আর কি।

ছবিটি বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় তোলা।

আমানত উল্লাহ শাহ পাড়ার এমদাদ, হানিফ, ইব্রাহিম ও সুজন আড্ডারত ছিলেন। তাদের মুখে ছিল না মাস্ক। জানতে চাইলে তারা বলেন, কিয়ের লকডাউন। সব চলে। আমরা কেন ঘরে থাকবো। জোর করে মানুষের কাজ কর্ম বন্ধ করে রাখছে। এইটা ছাড়া আর কোনো কার্যকারিতা নেই।
এদিকে, দায়িত্ব পালনরত স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার, মুখচেনাদের ওয়ার্ডের বাইরে আসা-যাওয়ার সুযোগ দানসহ বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাদামতলী, কর্ণেলহাটের মুখে দায়িত্ব পালন করা স্বেচ্ছাসেবকদের কয়েকজনের মুখের মাস্ক ছিল জামিতে। অন্যদিকে সাগরিকা শিল্প এলাকা থেকে উত্তর কাট্টলীতে প্রবেশের সড়কটিতে, মোস্তফা-হাকিম কলেজ রোডের কাউন্সিলরের বাড়ির সন্নিকটের ব্যারিকেডে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবকদের খোঁশগল্প করতে দেখা গেছে অরক্ষিতভাবে। তাদের সমবয়সী বন্ধুরাও তাদের সাথে যোগ দিয়ে গল্প করতে দেখা গেছে। তাদের সামনে দিয়েই স্থানীয়রা বাঁশের ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে অনায়াসেই যাওয়া-আসা করতে দেখা গেছে। বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নারী শ্রমিকদের বাড়িতে ফিরতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেই সাগরিকাসহ লকডাউন এলাকার ভেতরের বেশকিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বলে জানা গেছে।

উত্তর কাট্টলীর বাসিন্দা মো. শাহজাহান চৌধুরী দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, ওয়ার্ডে লকডাউন চলছে তা শুধু বোঝা যায় সেনাবাহিনীর গাড়ি, পুলিশের টহল আর দোকানপাটগুলো বন্ধের কারণে। জনসমাগম কিন্তু আগের মতোই হচ্ছে। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে তরি-তরকারি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রির অনুমতি প্রতিদিনের জন্য দেয়া উচিৎ হয়নি। তিনি বলেন, মানুষেরতো প্রতিদিন বাজার লাগে না। এসব ভ্যানগাড়ির কারণে মানুষে আরো বেশি ঘরের বাইরে আসছে। সপ্তাহে দু’দিন এসব ভ্যানগাড়ি বা তরি-তরকারি বিক্রির নিয়ম করে দিলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকতো। আর প্রশাসন অনেকটা গা-ছাড়া ভাবে কাজ করছে বলে আমার মনে হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষগুলোও কেমন জানি।  তিনি প্রশাসনকে আরো কঠোরভাবে তদারকির আহ্বান জানান।

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ