স্বাস্থ্যখাতে বাইরের হস্তক্ষেপ বেশি : মন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
স্বাস্থ্যখাতে বাইরের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ বেশি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এটা কমানো গেলে আমরা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব।  তিনি বলেন, আমরা যারা বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করি, তাদেরও আমি বলব ইন্টারফেয়ারেন্সটা কম করি।
জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বাইরের ইন্টারফেয়ারেন্স (হস্তক্ষেপ), বাইরের ইনফ্লুয়েন্সটা (প্রভাব) অনেক বেশি।  এটা কমাতে হবে।  এটা কমানো হলে আমরা আরও ভালোভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব।
সোমবার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে অধীন দপ্তর ও সংস্থার বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) শেষে বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।  মন্ত্রী বলেন, যেখানে আমরা অন্যায় দেখছি, সেখানে আমরা ছাড় দিচ্ছি না।  এটা আপনারাও দেখছেন।  দুটি প্রতিষ্ঠান অন্যায় করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।  যেখানে এটা দেখা দেবে, সেখানেই আইনের আওতায় আনা হবে।  তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের নজরে এসেছিল।  আমরা সেখানেও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলেছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যেখানে যে অন্যায় দেখা যাবে, আমরা চেষ্টা করব।  এটা একবারে ফেরানো যায় না, গোটা সমাজের দায়িত্ব আছে।  সমস্যা এক জায়গায় না, সমস্যা সব জায়গায় রয়েছে।  সব জায়গায় শুদ্ধ হওয়া দরকার।
দেশের স্বাস্থ্যখাতের অধিক সমালোচনার কারণে ভিন্ন কোনো মহল সুবিধা নিতে পারে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাস্থ্যখাত এখন আর সেই ভঙ্গুর অবস্থায় নেই।  সারাক্ষণ এই খাতকে বেশি সমালোচিত করলে মানুষ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আস্থা হারাবে এবং চিকিৎসার জন্য সামান্য কিছু হলেই বিদেশমুখী হবে।  এতে অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্যখাত লাভবান হবে।  আর আমাদের স্বাস্থ্যখাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  অথচ আমাদের দেশে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান।
জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি এখন অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।  হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যখাতে কোনো অনিয়ম হয় কি-না, তার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দেওয়া হয়েছে।  হাসপাতাল সেবা মনিটরিং-এর জন্য নতুন কমিটি করা হয়েছে।  কাজেই এখন যেখানেই অন্যায় হবে, সেখানেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশ করোনা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে।  আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর অবস্থা আমরা জানি।  আমাদের দেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং আমরা অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্থ্য সচেতন।  এরপরও করোনায় আমাদের মৃত্যুহার বিশ্বের সবচেয়ে কম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।  পার্শ্ববর্তী ভারত থেকেও আমরা অনেক এগিয়ে রয়েছি।  এই ভাইরাস কেবল আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, এটি বিশ্বের সব দেশেরই ক্ষতি করেছে।  কাজেই শুধু সমালোচনা করলেই সব সমাধান হবে না।  সমালোচনার পাশাপাশি আমাদের অর্জনগুলোও তুলে ধরতে হবে।  তাহলে দেশের মানুষ চিকিৎসা নিতে বিদেশে গিয়ে অযথা তাদের অর্থ-সম্পদ বেশি নষ্ট করবে না।  আর কোথাও কোনো অনিয়ম হলে আমরা অতি দ্রুত সেটির ব্যবস্থা নিতে কোনো রকম পিছুপা হব না।
স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনার পাশাপাশি ভালো অর্জনগুলোও প্রচারের অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করুণ অবস্থায় ছিল।  দেশে হাতেগোনা কিছু হাসপাতাল ছিল।  সেই অবস্থা থেকে বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় হাসপাতাল করা হয়েছে।  ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে।  এছাড়া মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট করা হয়েছে।  নিরাপদ মাতৃত্ব, শহর-গ্রাম সর্বত্র টিকাদান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।  দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান এখন উন্নত বলেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের মর্যাদাশীল পুরস্কার ভ্যাকসিন হিরো, সাউথ সাউথ, এমডিজি গোল অর্জনসহ বহু সংখ্যক সম্মান বয়ে এনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।  বর্তমানে দেশের প্রতিটি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।  পাশাপাশি আট বিভাগে আটটি ক্যানসার হাসপাতাল করা হচ্ছে।  ১০ হাজার চিকিৎসক, ১৫ হাজার নার্সসহ পর্যাপ্ত জনবল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় সংশ্লিষ্ট আট বিভাগের প্রধানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  চুক্তি সম্পাদন করা বিভাগগুলো হচ্ছে- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, নিমিউ’র টেকনিক্যাল ম্যানেজার, ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্কশপ ও অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ