বুধবার থেকে বন্ধ স্বাস্থ্য বুলেটিন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যতবানীর মধ্যেই করোনা নিয়ে নিয়মিত বুলেটিন বন্ধ করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।  প্রতিদিনের এই বুলেটিনে করোনা বিষয়ক নিয়মিত তথ্য ছাড়াও নিয়ম করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হতো।  তারপরও কেন বুলেটিন বন্ধ এই নিয়ে বিশ্লেষকরা পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেছেন।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক সূত্র জানায়, মূলত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অধিদফতরের বুলেটিন বন্ধ হচ্ছে।  তারা বলছেন, এত বড় সিদ্ধান্ত অধিদফতরের নেওয়ার ক্ষমতা নেই।  আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে, পরিস্থিতি ভালোর দিকে থাকায় তারা বুলেটিন বন্ধ করতে যাচ্ছেন।  বুধবার (১২ আগস্ট) থেকে দুপুর আড়াইটায় নিয়মিত এই বুলেটিন আর হবে না।  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় শেষ স্বাস্থ্য বুলেটিন পরিবেশন করা হবে অনলাইনে।  বুধবার থেকে গণমাধ্যমের কাছে প্রেস রিলিজ আকারে করোনা বিষয়ক আপডেট পাঠানো হবে।  এর আগে গত ৭ এপ্রিল করোনা বিষয়ক ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন নেওয়া বাদ দিয়ে তাকে বুলেটিন নাম দেওয়া হয়।  সেদিন ব্রিফিং এ যুক্ত হয়ে অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন, নিয়মিত ব্রিফিং হিসেবে প্রচার না করে তারা একে স্বাস্থ্য বুলেটিন হিসেবে প্রচার করবেন।  সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এর পরে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর আর হবে না’।
তারও আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনা ভাইরাস ইস্যুতে প্রথম ব্রিফিং আয়োজন করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তখন করোনা বিষয়ক সকল তথ্য দিতেন।  সেই সময় করোনা বিষয়ক ব্রিফিং দেশের মানুষের আগ্রহে পরিণত হয়।  এরপর গত মার্চ মাসে আইইডিসিআর থেকে ব্রিফিং করতে থাকে স্বাস্থ্য অধিদফতর, যদিও আইইডিসিআর পরিচালক তখন বলেছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকেই তারা ব্রিফিং করতেন।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং কমে এসেছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তাই আর একজন ব্যক্তি দিয়ে আর বুলেটিন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।  বুলেটিন কেন বন্ধ হচ্ছে এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘যেভাবে টেলিভিশনে এসে একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, এখন হয়তো সেভাবে আসবে না।  আগামীতে লেখায় আসবে, একটা প্রেস রিলিজের মতো করে আসবে।  কারণ, চার মাস, পাঁচ মাসতো হলোই, এখন একটু কন্ট্রোল হচ্ছে বলে আমরা মনে করি, একটু কমে আসতেছে।  রেগুলার ওইভাবে একজন ব্যক্তি দিয়ে প্রেস ব্রিফিং না করে প্রেস রিলিজ দেওয়া হবে’।
তবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান।  তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর কি করতে চাচ্ছে সেটা তারা নিজেরাই জানে না বলে আমার ধারণা।  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিকট অতীতে যা দেখতে পেয়েছি তাতে তাদের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে প্রজ্ঞা সম্পন্ন মনে হচ্ছে না।  বিভিন্ন সময়ে নানা আদেশ দেখছি তাতেও তাদের অপরিপক্কতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মেধার কোনও সংমিশ্রন নেই’।  তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো ব্রিফিং হচ্ছিল না, বুলেটিন হচ্ছিল।  সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না।  এখন এটাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দিলো, তারা প্রেস রিলিজ পাঠাবে।  কিন্তু এ ধরনের মহামারির পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবীতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছে কর্তৃপক্ষ, তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে।  আর সেখানে বাংলাদেশে হলো উল্টো পরিস্থিতি।  আমি মনে করি না, এখানে ‘হাইড অ্যান্ড সিকের’ কিছু আছে অথবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদফতরের বিব্রত হবার কোনো অবকাশ ছিল।  এগুলো কতটুকু বোধবুদ্ধি সম্পন্ন কাজ হচ্ছে সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে’।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই বুলেটিনে মানুষের কোনো আগ্রহ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস।  তিনি বলেন, ‘ওই বুলেটিন বন্ধ হলেই কি আর না হলেই কি’।  চিন্ময় দাস বলেন, ‘বুলেটিন থেকে জাতি বেশি কিছু পায়নি।  কারণ, দুনিয়া জুড়ে ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে, সেটাতো আগেই বন্ধ করেছে অধিদফতর।  কিন্তু এখানে শুধুমাত্র বুলেটিনের তথ্যের ওপর নির্ভর করে তারা বুলেটিন থেকে আর কোনো তথ্য কখনো পায়নি।  এমনকী তারা অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে কেউ কথাও বলতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে।  এই বার্তার নিশ্চয়ই কিছু শানে নুজুল আছে যেটা সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাই ভালো বলতে পারবেন’।
এর আগে গত পাঁচ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পূর্ব অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কথা বলতে নিষেধ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।  অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মুখপাত্র হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং অধিদফতরের প্রতিনিধিত্ব করেন।  নিয়মিত ব্রিফিং ছাড়াও এই সকল বক্তব্য ও মন্তব্যের কারণে অনেক সময় সরকারকে বিব্রত হতে হয়।  তারও আগে গত ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কোভিড-১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের কমিটি গঠন করা হয়।  গত ১৮ জুন তাকে বদলি করার পর নতুন করে আর কাউকে এই মিডিয়া সেলের প্রধান করা হয়নি।
অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, ‘আমরা প্রেস রিলিজ দিচ্ছি, বুলেটিনে যা বলা হয় সেটাই দেওয়া হয়।  তাই মন্ত্রণালয়ের মনে হয়েছে, এখানে রিপিট হচ্ছে, রিপিট করার কিছু নেই।  তাই বুলেটিন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত এসেছে।  আবার যদি কখনও স্পেশাল বা নতুন কোনো নির্দেশনা দেওয়ার মতো কিছু হয়, নতুন কোনো ডেভেলপমেন্ট থাকে তাহলে যেভাবে প্রেস কনফারেন্স হয় সেভাবে হবে।  তাই আর রেগুলার বুলেটিনের দরকার নেই’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ