পিছিয়ে থাকা বিলাইছড়িতে উন্মুক্ত হলো পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল

রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দূর্গম বিলাইছড়িতে যেন আনন্দের বন্যা বইছে।  দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবার দ্বার খুলেছে উপজেলাটিতে।  বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে ৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল কমপ্লেক্স।
স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছুই ছিল না উপজেলাটিতে।  পাহাড়ি এই অঞ্চলটি দূর্গম ও সড়ক পথ না থাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন একটা লাগেনি বললেই চলে।  বিলাইছড়ি উপজেলাতে রাঙামাটি থেকে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌপথ।  বিলাইছড়ি থেকে রাঙামাটি সদরে আসতে প্রায় তিন ঘণ্টার পানি পথ পাড়ি দিতে হয়।  ৩১ শয্যার একটি হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক ও সরঞ্জামের অভাবে সেটিও তেমন কাজে আসেনি।  চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হতো চিকিৎসকদের।  অবশেষে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর বিলাইছড়িবাসী একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল পেতে চলেছে।  বর্তমানে হাসপাতালটিতে আধুনিক সরঞ্জামসহ ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর এখন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে স্বপ্ন দেখছে উপজেলাবাসী।
বৃহস্পতিবার রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন।  এতে দীর্ঘদিন পর পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল পেয়ে খুশি উপজেলাবাসীও।  উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, সিভিল সার্জন বিপাশ খীসা, জোন কমান্ডার লে. কর্নেল তানবীর মাহমুদ (পাশা), নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসীন, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর উত্তম তঞ্চগ্যা প্রমুখ।
স্থানীয় বাসিন্দা উষামং বলেন, বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানায় এবং হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হলেও এখনো চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়নি।  তাই এটি দ্রুত চালুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।
রুবেল চৌধুরী বলেন, ৩১ শয্যা একটি হাসপাতালে যে কয়জন চিকিৎসা ছিল তাদের আবাসন ব্যবস্থা না থাকার অজুহাতে কেউ এখানে থাকতে চাইতেন না।  বর্তমানে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করাসহ চিকিৎসকদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে যার ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে এই উপজেলা মানুষ আর বঞ্চিত হবে না আশা করছি।
বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়সেনা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বিলাইছড়ি একটি প্রত্যন্ত উপজেলা।  আগে এখানকার সাধারণ মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হতো।  এটি অনেকের জন্য সম্ভব হতো না।  বর্তমানে হাসপাতালটিতে আধুনিক সরঞ্জামসহ ৫০ শয্যায় উন্নীত করায় এখানকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য আর অন্য কোথাও যেতে হবেনা।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, একটা হাসপাতালে যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সবকিছুই এখানে রাখা হয়েছে।  এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, আসবাবপত্র আগেই চলে এসেছে কিন্তু পুরাতন হাসপাতালের কারণে কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা সম্ভব ছিল না।  বর্তমান ভবনে এক্সে, ইসিজিসহ আরো বেশ কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা সম্ভব হবে।  তিনি আরো বলেন, দূর্গম এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে যে ঘাটতি ছিল তা আর থাকবে না।  তবে দূর্গম একটি উপজেলা হিসেবে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকার পরও একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরির বিষয়ে সচেষ্ট ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
রাঙামাটি সংসদীয় আসনের এমপি দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি উপজেলায় ৫০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।  হাসপাতালগুলো ৫০ শয্যায় উন্নীত করায় যেসব শূন্য পদ সৃষ্টি হয়েছে সেই পদে লোক নিয়োগের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রাখবো আমি।

ডিসি/এসআইকে/এমএ