ক্ষতির দায় স্বাস্থ্যবিভাগ-সরকারের নয়- এমন সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করে টিকা নিতে হবে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
জানুয়ারি মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে দেশে করোনার টিকার প্রথম চালান আসবে।  সব প্রস্তুতি শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।  তবে টিকা নিতে হলে গ্রহীতাকে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক এসব কথা জানান।  সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
ডা. শামসুল হক বলেন, ‘করোনার টিকা নেওয়ার আগে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।  কারণ, যাকে আমরা টিকা দিচ্ছি, তার একটা অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে।  আমরা একটি সম্মতিপত্র তৈরি করেছি।  সেখানে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, তারিখ, পরিচয়পত্র ও নাম থাকবে’। তিনি জানান, সম্মতিপত্রে লেখা থাকবে- ‘করোনার টিকা সম্পর্কে আমাকে অনলাইনে এবং সামনাসামনি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।  এই টিকা গ্রহণের সময়, অথবা পরে যেকোনো অসুস্থতা, আঘাত বা ক্ষতি হলে, তার দায়ভার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা সরকারের নয়’।
‘আমি সম্মতি দিচ্ছি যে, টিকা গ্রহণ ও এর প্রভাব সম্পর্কিত তথ্যের প্রয়োজন হলে আমি তা প্রদান করবো।  জানা মতে, আমার ওষুধজনিত কোনো অ্যালার্জি নেই’- এ বিষয়টিও সম্মতিপত্রে উল্লেখ করতে হবে জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, ‘এটা খুবই ইমপর্টেন্ট।  কারণ, এ বিষয়টি যদি তিনি না জানান, তাহলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে, তখন আমরাও বুঝতে পারবো না’।
টিকা গ্রহীতাকে আরও সম্মতি দিতে হবে যে, ‘টিকাদান পরবর্তী প্রতিবেদন, অথবা গবেষণাপত্র তৈরির বিষয়ে অনুমতি দিলাম।  আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এই টিকার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত হয়ে টিকা গ্রহণে সম্মত আছি’।
ডা. শামসুল হক বলেন, ‘এই সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে এবং এটা আমাদের কাছে থাকবে’।
টিকা নিলে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে
করোনার ভ্যাকসিন নিলে মাথাব্যথা, হালকা জ্বর, যেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে সেখানে ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা বা কারও কারও বমিও হতে পারে।  সিভিয়ার যে রিঅ্যাকশন হয় সেটা হচ্ছে শ্বাসকষ্ট হওয়া।  সিভিয়ার জ্বরও হতে পারে।  তবে এটা সাডেন শক।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক এ কথা জানান।
তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার দুই থেকে তিন শতাংশের মতো।  তবে যেকোনো টিকার ক্ষেত্রেই মাইল্ড থেকে মডারেট বা সিভিয়ার সাইড ইফেক্ট হতে পারে।  তবে বাংলাদেশে শিশু এবং বড়দেরও যে টিকা দেওয়া হয় সেখানে এনাফাইলিক্সিস বলে একটা কথা রয়েছে।  এই এনাফাইলিক্সিস হচ্ছে একটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া- যেটা হতেই পারে।  তবে এনাফাইলিক্সিসের আবার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে।  তবে একটা জিনিস আমরা বলবো, যারা আমাদের টিকা দেবে, টিকাদান কেন্দ্রে যারা থাকবেন, তাদের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
তিনি জানান, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে আমাদের উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক মেডিক্যাল টিম থাকবে এবং কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত ওষুধ এনাফাইলিক্সিসের জন্য মজুত রাখা হবে।  যাতে চিকিৎসক দল সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হতে পারে অথবা উপজেলা হাসপাতালে চলে আসে।  উপজেলা হাসপাতালেও যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটে সে বিষয়টি ভেবে সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে করোনার টিকার প্রথম চালান আসবে।  সব প্রস্তুতি শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনার টিকার প্রয়োগ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
সেখানে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বলেন, তবে আমার মনে হয় খুবই কম মানুষের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা থাকবে।  সেটা যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রেই এ আশঙ্কা থাকে।  যেহেতু নতুন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তাই আমরা প্রাথমিকভাবেই পরিকল্পনার করেছি।  মোবাইল টিম থাকবে, টিকাদান কেন্দ্রে বেসিক ও ওষুধ লাগলে ইমিডিয়েটলি ম্যানেজ করার জন্য সেগুলোও থাকবে।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, উপজেলা কেন্দ্রে যতদূর সম্ভব সে ব্যবস্থা রাখা হবে।  এর ব্যাকআপ হিসেবে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কমিটি থাকবে, যারা এগুলো বিচার বিশ্লেষণ করবেন, এসব সমস্যা ভ্যাকসিনের কারণে হয়েছে নাকি তার আগে থেকেই থাকা অন্য অসুস্থতায় হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ