ক্যানসার বড় কঠিন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
গত ৩০ জানুয়ারি নরসিংদীর বাবুরহাট থেকে জাতীয় ক্যানসার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ইশ্রাফিল।  তার আগে চার মাস থাকতে হয়েছিল এই হাসপাতালেই। সঙ্গে আছে মা।  বাড়িতে অসুস্থ বাবা আর ছোটবোন।  ক্যানসার হাসপাতালে মা-ছেলের সঙ্গে দেখা হয় এ প্রতিবেদকের।
মা মার্জিয়া বেগম বলেন, ‘গত রোজার সময় একদিন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে ইশ্রাফিল।  উঠেই জানায় হাতের নিচে কিছু একটা হয়েছে। এলাকার ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ এনে দেই। তাতে সারেনি’।
‘চামড়ার ওপর হাত দিলে মনেই হয় না চামড়া। এত পাতলা।  নরসিংদীর হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। সারে না।  আট দিন গেল।  আমি মনে করলাম সেরে গেছে।  হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাই। আবার ফুলে ওঠে।  ছড়িয়ে যায় কয়েক জায়গায়। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তারও ফেরত পাঠায়’।
‘পরে ঢাকা মেডিক্যালে গেলাম। সেখানে অপারেশন হয়। বলা হলো, বায়োপসি করতে।  তারা বললো এটা ক্যানসার’।
মার্জিয়া বেগম জানালেন, ‘দুই শতক জায়গা ছিল। সেটা বিক্রি করে চিকিৎসা করাচ্ছি।  এখন টাকা নাই। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এতদূর।  আর পারি না। আল্লাহই জানেন,  কিভাবে টাকার যোগাড় হবে। ছেলেকে তো বাঁচানো লাগবে’।
এর আগে হাসপাতালের এক চিকিৎসকের দেওয়া টাকায় ওষুধ এনেছেন।  ছেলের মাথায় হাত বোলাতে গিয়ে বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছে ওর অবস্থা নাকি খারাপ।  একদিন আনলাম ২২ হাজার টাকার ওষুধ, আরেকদিন ১৭ হাজার টাকার। আমার সামর্থ্য নাই।  সব শেষ। এখানে আর কতদিন থাকতে পারবো জানি না’।
সাত বছর আগেই অসুস্থ হয়ে ঘরে বসা ইশ্রাফিলের বাবা।  মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতেন।  ছেলের চিকিৎসার জন্য শেষ সম্বলটাও বিক্রি করেছেন।  এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
মার্জিয়া বেগম আশায় আছেন, যদি কেউ তার ছেলের জন্য এগিয়ে আসে, তবে হয়তো সুস্থ হয়ে উঠবে ইশ্রাফিল।  তারপর আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কায়ক্লেশে।
একই হাসপাতালে দেখা হয় সাত বছরের জুনাইদের সঙ্গে।  চার মাস চিকিৎসার পর ডাক্তররা জানান জুনাইদ হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত। চারটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। দিতে হবে আরও দুটি।  তারপর সার্জারি করবে বলে জানিয়েছেন জুনাইদের মা আদুরি বেগম।
চারমাসে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘হাসপাতালের পাশেই বাসা ভাড়া করে থাকি।  দিনে ৩০০ টাকা করে। সঙ্গে খাওয়া খরচ আছে।  চারমাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। জমি-জমা কিছু আর নেই।  তারপরও যদি ছেলেটাকে বাঁচানো যায়…’।
সাত বছরের আরাফ নয়তলার ওয়ার্ডে।  ফরিদপুর থেকে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এসেছেন বাবা-মা।  সাত মাস ধরে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে আরাফের।  মাঝে মাঝে বাড়ি যাওয়া হয়। আবার আসতে হয় হাসপাতালে।
‘ফরিদপুরে অনেক হাসপাতালে গিয়েছি। কেউ কিছু বলতে পারেনি।  পরে সেখানকার এক চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসি।  পরীক্ষার পর আরাফের ক্যানসার ধরা পড়ে’।  জানালেন আরাফের মা।
ব্লাড ক্যানসার আক্রান্ত আরাফকে মাঝে মাঝেই রক্ত দিতে হয়।  আত্মীয়দের কাছে ধারদেনা চলছে।  সাত মাসে প্রায় চার লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে জানিয়ে মা বলেন, ‘মধ্যবিত্ত সমাজের এই এক দায়- না পারি কারও কাছে চাইতে, না পারি ছেলের অসহায় অবস্থা দেখতে। ক্যানসার বড় কঠিন, সব কেড়ে নেয়’।

ডিসি/এসআইকে/এমএস