প্রশাসনের নেই তদারকি, খালের ভেতর সারি সারি টয়লেট!

এম. জুবাইদ, পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি >>>
কক্সবাজারের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী খালের ভেতর সারি সারি খোলা টয়লেট।  পাশে চলাচলের রাস্তা।  রাস্তা দিয়ে কোনো পথচারী হেঁটে গেলেই টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ আসে।  পশ্চিম বাইম্যাখালী এলাকার চিত্র এটি।  পেকুয়া উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৩শ গজ।  বছরের পর বছর ধরে এখানকার চিত্র একই।  পেকুয়া উন্নত হয়ে উপজেলায় রূপান্তর হলেও পরিবর্তন হয়নি এই এলাকার চিত্র।  এতে করে খালের পানি দূষিত হচ্ছে।  দূষণ ঘটছে পরিবেশের।  এছাড়া কাটা ফাঁড়ি খালের পাড়েও দেখা যায় একই দৃশ্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পশ্চিম বাইম্যাখালী এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ।  উপজেলা সদরে অবস্থিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকায় অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতাসহ নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া এলাকা এটি।  এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র ও দিনমজুর।  বৃহত্তর বাইম্যাখালী এলাকার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে খালটি।  এলাকার চাষাবাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এই খালের দুই পাশে রয়েছে শত শত খোলা টয়লেট।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, বৃহত্তর বাইম্যাখালীর দুই অংশ পেকুয়া সদরের দুই ওয়ার্ডের অংশবিশেষ।  উপজেলা সদর দপ্তরের নিকটে হলেও এ এলাকায় কোনো স্কুল না থাকায় শিক্ষায় পিছিয়ে আছি আমরা।  এছাড়া ঘনবসতি হওয়ায় খোলা পায়খানার প্রবণতা এখনো রয়ে গেছে।
পশ্চিম বাইম্যাখালীর মুদির দোকানি নুরুল আলম বলেন, আমাদের এলাকায় জন্মের হার বেশি, শিক্ষার হার কম।  গরিব মানুষ।  স্যানিটেশন, পরিবেশ দূষণ এগুলো কেউ বুঝে না।  আর উপজেলার সাহেবরা কেউ কোনোদিন এসব বোঝাতে আসেননি।
একটি এলাকায় এত খোলা পায়খানা কখনো নজরে এসেছে কিনা জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জয় প্রকাশ চাকমা বলেন, আমি পেকুয়ায় যোগ দিয়েছি আড়াই বছর হচ্ছে।  কেউ আমাকে বিষয়টি জানায়নি।  আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আমরা স্যানিটারি ল্যাট্রিন বিতরণ করেছি।  এছাড়া উজানটিয়ায় ৩৫টি, রাজাখালীতে ৩৫টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও ৩০টি টিউবওয়েল স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলায় কতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করা গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।  জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর এলাকার স্যানিটেশন বিষয়ে কী কাজ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো এনজিওদের কাজ।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ জানান, আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া নিবো।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাছেম বিল্যাহ জানান, উপজেলা সদর দপ্তরের অতি নিকটে।  এতগুলো খোলা পায়খানায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে- এ বিষয়টি উৎকণ্ঠার।  বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখব।  সামনে বর্ষাকাল আসছে।  তাই এসব খোলা পায়খানা সরানো না গেলে বর্জ্য আশেপাশে ছড়িয়ে পরিবেশের আরো বেশি ক্ষতি করতে পারে।
পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ল্যাট্রিন, টিউবওয়েল বিতরণসহ সারা বছরই পেকুয়ায় স্যানিটেশন কার্যক্রম চলমান থাকে।  সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল থাকায় সঠিকভাবে সঠিক স্থানে কাজ করা সম্ভব হয় না।  আগামিতে আমরা বাইম্যাখালীসহ যেসব এলাকায় খোলা টয়লেটের কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে সেসব স্থানকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব।

ডিসি/এসআইকে/এমজে