অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ভারত ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। কারণ মানুষ ক্রমেই অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ওয়ার্ল্ড অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহের প্রাক্কালে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে , চিকিৎসকদের নির্দেশিকা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহার স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি ডেকে আনে । ভারতের বিখ্যাত মাইক্রোবায়োলজিস্ট পল্লব রায় আনাদোলু এজেন্সিকে বলেছেন- ‘যদি এটি বন্ধ না করা হয়, তাহলে প্রতিরোধের হার বাড়বে এবং মাল্টি রেসিস্টেন্স অর্গ্যানিসিমের কারণে মৃত্যু আরও বেশি হবে’। ২০১৫ সালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একটি বহু-দেশীয় সমীক্ষায় ভারতে ব্যাপক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সন্ধান পেয়েছে। পরবর্তীকালে, ২০১৭ সালে সরকার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরী করে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিক্স, ইকোনমিক্স এবং পলিসি দ্বারা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ‘স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস অ্যান্টিবায়োটিক, ২০২১’ রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ২০১০-২০ এর মধ্যে ৪৭% বেড়েছে। পল্লব রায় বলেন- মানুষকে ভালো অনুজীব ও খারাপ অনুজীবের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সেই ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে না যা সাধারণত সর্দি, কাশি , সিজনাল ফ্লু এবং ডায়রিয়ার মতো অসুস্থতার কারণ ৷ পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও মানুষের আরো জানা প্রয়োজন বলে মনে করেন মাইক্রোবায়োলজিস্ট পল্লব রায়। তিনি বর্ণনা করেছেন ‘অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার সারা বিশ্বে একটি সমস্যা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বে’। তবে রায় আশাবাদী , গত দশকে বা তারও বেশি সময়ে, অ্যান্টিবায়োটিকের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি অব্যাহত থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের চিকিত্সকরা বলছেন যে, তারা হাসপাতালে মহামারির উচ্চপর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করেছেন । দেশের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন হাবিব জানিয়েছেন , ‘আমরা, আমাদের গবেষণায়, হাসপাতালগুলিতে COVID-19-এর সর্বোচ্চ সময়ে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখতে পেয়েছি। কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার মহামারীতে কার্যকারিতা ৫০ % পর্যন্ত হ্রাস করেছে’ ।
বাংলাদেশ অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কবলে পড়েছে
বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, দেশের হাসপাতালগুলিতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এমন অনেক শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে যাদের শরীর স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত প্রতিরোধী। ডা. হাবিব উল্লেখ করেছেন যে, পশুদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার দেশের জন্য আরেকটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক কৃষক , পশুপালক বিশেষ করে যাদের ফার্ম আছে তারা ব্যাক্টেরিয়ার হাত থেকে বাঁচতে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। লক্ষ্য করা গেছে , ইনসেনটিভ কেয়ারে নন-COVID-19 রোগীদের মধ্যে মৃত্যুগুলি মূলত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের কারণে ঘটছিল। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে নতুন ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না ঠিকই , তবে এভাবে চলতে চলতে একসময়ে মানব শরীর আর অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে সাড়া দিতে পারে না , যার জেরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডা. হাবিব বলেছেন, ব্যাকটেরিয়া সরাসরি জিন সংক্রমণের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা বহন করে নিয়ে যেতে পারে। হাসপাতালের অনুপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জেরেও অ্যান্টিবায়োটিকগুলি পরিবেশকে প্রভাবিত করছে । আমাদের শরীর একটি অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণরূপে শোষণ করতে পারে না। অ্যান্টিবায়োটিকের একটি একক ডোজ থেকে সাধারণত ২০%-৬০% মানুষের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে এবং মানুষের বর্জ্যে জীবিত থাকে। আর তাই হাসপাতালের অনুপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্ট অংশগুলি জমা করে আরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সূত্র : www.aa.com.tr

ডিসি/এসআইকে/আরসি